ব্যয়ের সক্ষমতা কম তবু বড় এডিপি
বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে আরেকটি বড় উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) দিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি হাতে নেওয়া হয়েছিল। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, এর সিংহভাগ অর্থই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাটছাঁটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) এডিপির বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। গত ৫ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৩৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৯ হাজার ৪১১ কোটি, বৈদেশিক সহায়তার ১১ হাজার ৪০৭ কোটি এবং
বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
আইএমইডির অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ আছে ১৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও ব্যয় হয়নি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন ১ দশমিক ২৪, জননিরাপত্তা বিভাগের ২ দশমিক ৯১, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২ দশমিক ২১ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। আরও আছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২ দশমিক ৯২, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের শূন্য দশমিক ০৫, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩ দশমিক ০৪, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৪ দশমিক ১৫ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। পাঁচ শতাংশের নিচে বাস্তবায়ন হার রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আর্থিক সংকট, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণসহ নানা কারণে চলমান ১ হাজার ৩৫২ প্রকল্পে বিরাজ করছে স্থবিরতা। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন এবং বৈদেশিক অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে কর্মসংস্থান, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, অর্থ প্রবাহের স্বাভাবিক গতি কমা এবং প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত সুফলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি প্রকল্পগুলোয় মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
২০১৫-২০১৬ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপির সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে। অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে। এ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ। এর পরের দুই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৭ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল অর্থ বিভাগ। তবে এসব সুপারিশ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম