নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে পথ দেখাচ্ছে সোনাগাজী
একটা সময় ছিল বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। সবুজ ঘাসের ওপর চড়ে বেড়াত গবাদিপশু। ফেনী নদীর বাঁক সোজাকরণের পর মোহনার কাছে জেগে ওঠা সেই অনাবাদি ও পতিত জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিনটি প্রকল্পের সমন্বয়ে গড়া ওঠা কেন্দ্রটির একটি প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এতে প্রতি ঘণ্টায় জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ১০০ মেগাওয়াট করে তিনটি প্রকল্প থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্য দিয়ে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে দেশের পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিকাশে অপার সম্ভাবনার কথা বলছে।
সোনাগাজী সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি হিসাবে কয়লা, গ্যাস ও তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কারণে বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এর থেকে বাঁচতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। এর একটি প্রকল্প থেকে চলতি ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রতি ঘণ্টায় যুক্ত হচ্ছে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শিগগিরই তা ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। মোট ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। একটি প্রকল্প চালুর পর থেকে গত আট মাসে ৭২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা অন্যান্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাশ্রয়ী। এ প্রকল্প সূর্যের বিকিরণের ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ফেনীর সমুদ্র উপকূলের জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের গতিবেগের ১০০ বছরের সমীক্ষার বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকায় লবণাক্ত পানি রোধে পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব সৌর বিদ্যুতের এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে বিদ্যুৎ সংকটের যেমন সুরাহা হবে, তেমনি পরিবেশেরও উন্নতি হবে। এ ছাড়া এর জ্বালানি নবায়নযোগ্য হওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি বাবদ দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায় হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
প্রকল্পের অপারেটর মাহমুদ জুয়েল বলেন, এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি নির্ভর করে রোদের ওপর। এতে আরও কিছু ফ্যাক্টর আছে, যার অন্যতম হচ্চে বাতাসের গতি ও তাপমাত্রা। সব কিছুর ওপর নির্ভর করে এখানে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন হয়। শুধু রোদের ওপর নয়, রোদের নির্ভরশীলতা বেশি।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আরিফ রিজভী বলেন, সাধারণত আমাদের দেশে গ্যাস, কয়লা ও তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দিন দিন ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার দাম বাড়ছে।
এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে, যা সবার জানা। শুরু থেকে আমরা যদি সৌরশক্তি কাজে লাগাতাম, তা হলে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হতো না, ব্যয়ও বাড়ত না। যাই হোক, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের এ খাতে নজর দেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালে শুরু হয় দেশের বৃহত্তম এ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৮০০ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে বাংলাদেশ সরকার ও ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৃণা সোলার ও এইচওয়াইডিসি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়নে সৌর বিদ্যুতের জন্য এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২৮৪ একর জমিতে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১০০ মেগাওয়াট করে আরও তিনটি প্রকল্পের ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৭১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে।