শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

আবু আলী
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

শেয়ারবাজারের লেনদেনের খরা কিছুতেই কাটছে না। একদিন বাড়ে তো অন্যদিন আবার তলানিতে। বেশ কিছুদিন ধরে এভাবেই চলছে শেয়ারবাজার। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা বিপর্যস্ত। প্রতিদিন কমছে শেয়ারের দাম। গতকাল মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। যা গত

৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। এতে কমছে তারল্য প্রবাহ। আসছে না নতুন বিনিয়োগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারছে না।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েক দিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি)

পুনর্গঠন করা হলেও তারা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারছে না।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই কিছু না কিছু লোকসান করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর লোকসানের পাল্লা ভারী। ফলে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে। নতুন করে বিনিয়োগ আসছে কম। সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে নানা শঙ্কা এবং ব্যাংকের উচ্চ সুদহার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি পতনের অন্যতম কারণ মনে করছেন তারা।

বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারি বন্ড ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন নেতৃত্বের ওপর অনাস্থাসহ নানাবিধ কারণ দায়ী বলে মনে করছেন ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এখন সরকারি বন্ড এবং ব্যাংকের আমানতে যে হারে সুদ মিলছে, সেখানে এমন নিরাপদ বিনিয়োগ ছেড়ে মানুষ হয়তো শেয়ারে বিনিয়োগের কথা ভাবছে না। আবার উচ্চ সুদহারের কারণে অনেকে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। নতুন বিনিয়োগ না হলে ব্যবসা বা মুনাফায় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে যাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিলেও এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে আসেনি। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ লেগে আছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপিসহ সক্রিয় অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায়। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

বাজার পরিস্থিতি : গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। এটি গত ৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম লেনদেন। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম লেনদেন আর হয়নি। লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দাম কমেছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। ফলে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৯টির এবং ৮৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে নেমেছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম লেনদেন আর হয়নি।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি : এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যগের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিন দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ডিএসই ও ডিবিএর প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ : গতকাল বিকালে ডিএসইয়ের চেয়ারম?্যান মমিনুল ইসলাম এবং ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তার অফিসে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা পুঁজিবাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা, নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধান, সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাজারে তালিকাভুক্তকরণ এবং কর নীতিতে কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেন। অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবনাগুলো ইতিবাচক বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বস্ত করেন।