ভাত নিয়ে এখনও অপেক্ষায় শহীদ সমুদ্রের মা

বাসস
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ভাত নিয়ে এখনও অপেক্ষায় শহীদ সমুদ্রের মা

আদরের সন্তান দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। ছেলেকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু ছেলের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি যেন দেওয়া হয়। সরকার যেন সব শহীদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়। এ দাবি সন্তানহারা পিতা মো. মনিরুজ্জামান তাজুলের। তার ছেলে মো. মোস্তফা জামান সমুদ্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। সমুদ্র দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের নিবাসী মো. মনিরুজ্জামান তাজুল ঢাকার রামপুরায় মহানগর প্রজেক্টে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার ছেলে শহীদ মো. মোস্তফা জামান সমুদ্র (১৭) ঢাকার আল-ফোরকান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। সিদ্বেশ্বরী

কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

মো. মনিরুজ্জামান তাজুল বাসসকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই মোস্তফা জামান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। গত ১৯ জুলাই সকালে বাসা থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে রামপুরায় ডিআইটি রোডে নেমে আসে। বেলা ৩টায় আমি জুমার নামাজ শেষে বাসায় এসে ভাত খেতে বসি। আর সমুদ্রের মা নামাজে দাঁড়ায়। এমন সময় ওর এক বন্ধু ফোন করে বলে, সমুদ্র গুলিবিদ্ধ হয়ে ডেলটা হাসপাতাল আছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাজুল আরও বলেন, খাবার ফেলে দৌড়ে ডেলটা হাসপাতাল গিয়ে দেখি পাঁজরে গুলিবিদ্ধ আমার ছেলে খালি গায়ে মেঝেতে পড়ে আছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীর গরম। সঙ্গে সঙ্গে কোনো রকমে সেখান থেকে পাশের বেটার লাইফ হাসপাতাল নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন রাতেই নিজ গ্রামে এনে জানাজা শেষে দাফন করি তাকে। তিনি আরও বলেন, সমুদ্র এর আগের দিন আন্দোলনে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাসায় আসে। ঘটনার দিন নিষেধ করেছিলাম বাইরে যেতে। তার পরও সকালে বন্ধুদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসে। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তির জন্য ফরম এনেছিল। সমুদ্রের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ করে দেশেই ব্যবসা করবে।

মনিরুজ্জামান বলেন, দুই পুত্র আর এক কন্যার মধ্যে সমুদ্র ছিল সবার ছোট। বড় ছেলে মোর্শেদুজ্জামান পিএইচডি করে জাপানে আছে। আর মেয়ে মিরানা জামান স্বামীর সঙ্গে ফিনল্যান্ডে বসবাস করে। ইচ্ছা ছিল ছোট ছেলেকে নিয়ে দেশেই থাকব। ব্যবসাবাণিজ্য করব। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। তাই ঢাকায় সব ফেলে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি।

শহীদ সমুদ্রের মা মাসুদা জামান বলেন, সমুদ্র সকালে বলে যায় জুমার নামাজ পড়ে বাসায় এসে দুপুরের ভাত খাবে। আমি ভাত বেড়ে সন্তানের অপেক্ষায় থাকি। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ফোন করে সমুদ্রকে বাসায় খেতে আসতে বলি। সে দুই মিনিট পরে আসার কথা বলে। দুপুর গড়িয়ে যায়। সমুদ্র বাসায় আসে না। টেবিলে ভাত বেড়ে আমি নামাজ পড়তে যাই। নামাজ পড়াবস্থায় ফোন আসে সমুদ্র গুলি খেয়েছে। অশ্রুসজল এই মা এখনও চোখের পানি ফেলেন আর বলেন, আমার বাবা আর ভাত খেতে আসে না। আমি অপেক্ষায় থাকি। আমার অপেক্ষা শেষ হয় না।

মনিরুজ্জামান তাজুল বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। আর কেউ খোঁজ নেয়নি। কোনো আর্থিক সাহায্য চাই না। আদরের সন্তান অবিচার-অত্যাচার আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে।