শরীরে অসংখ্য ছররা গুলি, যন্ত্রণায় কাতর সোবহান

বাসস
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শরীরে অসংখ্য ছররা গুলি, যন্ত্রণায় কাতর সোবহান

আব্দুস সোবাহানের শরীরে এখনো অংসখ্য ছররা গুলির ক্ষত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়ে এখনও ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি।

আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন সোবাহান (৪০)। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে ঢাকার সাভার উপজেলার মুক্তির মোড় এলাকায় বিকাল ৪টায় দিকে বিজয় মিছিলে অংশ নেন। এ সময়ে মারমুখী পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি তার সারা শরীরে বিদ্ধ হয়। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয় তার ছেলে ইমন ইসলামও। বর্তমানে আর্থিক সংকটে চিকিৎসা করাতে না পেরে শরীরে থাকা ছররা গুলি নিয়ে নিজের বাড়িতে অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে তার। সোবহানের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কাটি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল আলার ছেলে। ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়াদুধ কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে চাকরির সুবাদে থাকতেন সাভার এলাকায়। পরিবার নিয়েই থাকতেন তিনি।

আহত সোবহান জানান, ঢাকার সাভার এলাকার মুক্তির মোড়ে স্ত্রী সাগরিকা ও ছেলে ইমন ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলে যোগ দেন তিনি। মিছিল চলাকালে পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করার জন্য ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় তার শরীরে অসংখ্য ছররা গুলি লাগে। তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানও গুলিবিদ্ধ হয়। ছররা গুলি আমার দুই পায়ে, বুকে, পিঠেসহ সারা শরীরে লাগে। এ সময় আমার ছেলের ঠোঁটে ও নাভিতে গুলি লাগে। তবে আমার স্ত্রী অক্ষত ছিল। সে সুস্থ আছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়াদুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন সোবহান। এখন অর্থসংকটে পড়েছেন। বর্তমানে তার ডান পায়ে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। চলতে-ফিরতে তার সমস্যা হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি সাভার এনাম মেডিক্যাল, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকা মেডিক্যাল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সোবহান।

এদিকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি থাকায় যন্ত্রণায় হাঁটা-চলায় কষ্ট হচ্ছে সোবহানের। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। এখন শরীরে থাকা গুলি বের করতে অপারেশন করতে হবে। এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন; কিন্তু বসতবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জমি বা সম্পদ নেই, যা বিক্রি করে তিনি চিকিৎসা করাবেন। বর্তমানে আর্থিক সংকটে দিন কাটছে সোবহানের। তিনি বলেন, আমি যেন ভালো চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হতে পারি, পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারিÑ এ জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।

সোবহানের স্ত্রী সাগরিকা বলেন, স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। এ অবস্থায় সংসার চালানো ও স্বামী-সন্তানের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সরকারের কাছে তার স্বামী-সন্তানের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন।