গ্যাস সংকট কাটাতে আট কূপ খনন করবে বাপেক্স

লুৎফর রহমান কাকন
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
গ্যাস সংকট কাটাতে আট কূপ খনন করবে বাপেক্স

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (বাপেক্স) আগামী দুই মাসের মধ্যে আটটি গ্যাস কূপ খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাতে গভীর গ্যাস সংকটে থাকা দেশ কিছুটা হলেও গ্যাসের জোগান দিতে পারবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব দৈনিক আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, গ্যাস কূপ খনন ও উত্তোলনে বাপেক্স ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলতাও এসেছে। সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে বাপেক্সের মোট ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আটটি কূপ খননসহ অনেকগুলো ব্লকে জরিপের কাজ চালানো হবে।

আগামী দুই মাসের মধ্যে যেসব কূপ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট), বিজয়-১০ রিগ ব্যবহার করে যার খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই কূপের তিনটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। প্রতিদিন ১২-১৯ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস পরীক্ষামূলক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া একই রিগ

ব্যবহার করে জানুয়ারি থেকে জামালপুর-১ এক্সপ্লোরেশন কুপ খনন কাজ শুরু হবে। নোয়াখালী থেকে জামালপুর রিগ স্থানান্তর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিজয়-১১ রিগ ব্যবহার করে তিতাস-১৬ কুপ ওয়ার্কওভার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষে এ রিগ ব্যবহার করে হবিগঞ্জ-৫ কূপ ওয়ার্কওভার জন্য তিতাস লোকেশন থেকে হবিগঞ্জ-৫ এ স্থানান্তরিত হবে।

এ ছাড়া বিজয়-১২ রিগ ব্যবহার করে সম্প্রতি জকিগঞ্জ-১ কূপের ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখানে দৈনিক ১০-১৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস পরীক্ষামূলক উত্তোলন বা সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। কৈলাশটিলা-৭ ওয়ার্কওভার কাজের জন্য এর রিগ স্থানান্তরিত হচ্ছে।

বিজয়-১৮ রিগ ব্যবহার করে সম্প্রতি সিলেট-৭ কূপের ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখানে দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস টেস্টিং সম্পন্ন বা পরীক্ষামূলক উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া কৈলাশটিলা-১ বা রূপগঞ্জ-১ ওয়ার্কওভার কাজের জন্য রিগ স্থানান্তরের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করা হচ্ছে।

আইপিএস কর্ডওয়েল রিগ সম্প্রতি রিগের কমিশনিং শেষ হয়েছে। সুন্দলপুর-৪ অনুসন্ধান কুপ খননের লক্ষ্যে রিগ স্থানান্তরের কাজ দ্রুতই শুরু করবে কোম্পানিটি। নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর এলাকায় টুডি সাইসমিক বা দ্বিমাত্রিক জরিপের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং ৪৭৭ লাইন কিলোমিটার সার্ভে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ভোলার ট্রানজিশন এলাকায় দ্র্রত দ্বিমাত্রিক সাইসমিক জরিপ কাজ শুরু হবে। জকিগঞ্জ, পাথারিয়া এলাকায় থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক সাইসমিক জরিপের ফিল্ডের ডাটা সংগ্রহ শেষে বর্তমানে ডাটা ইন্টারপ্রেটেনশনের কাজ চলছে। এ ছাড়া শেরপুর ময়মনসিংহ বর্ডার বরাবর জিওলজিক্যাল উপাত্ত সংগ্রহ ও সার্ভে কাজ নভেম্বর মাস থেকে চলছে বলে বাপেক্স সূত্রে জানা যায়।

উল্লেখ্য, দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে এবং দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।

গ্যাসের অভাবে এরই মধ্যে ২০০ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও ৩০০টি কারখানা বন্ধের পথে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে সরবরাহকারীদের আগ্রহের অভাব এবং আর্থিক সংকট গ্যাস সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে।