টেকসই ও সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নে আবার ভাটা

জিয়াদুল ইসলাম
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
টেকসই ও সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নে আবার ভাটা

টেকসই ও সবুজ শিল্প খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণে আবার ভাটা পড়েছে। সর্বশেষ তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ খাতে সার্বিক ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। অথচ আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) ঋণ বিতরণ বেড়েছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। সবশেষ তিন মাসে বেসরকারি, বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণে সক্ষম হলেও পিছিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

টেকসই অর্থায়ন বলতে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন, ঋণের গুণগত মান এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে এমন খাতে ঋণ বিতরণ বোঝায়। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প ইত্যাদি। এছাড়া, সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য-পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, পানি ও কাগজের খরচ কমানোর উপযোগী প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোকে সবুজ শিল্প হিসেবে ধরা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে এ দুই খাতে অর্থায়ন বাড়াতে নীতিমালা জারি করে টার্গেট বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও আশানুরূপ ঋণ বিতরণ করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ছয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো-সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট।

নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের অন্তত ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে বিতরণ করতে হবে। আর পরিবেশবান্ধব খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ বিতরণের শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে টেকসই ও সবুজ শিল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এটি আগের তিন মাসের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা কম। ওই তিন মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ করেছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। তবে তার আগের তিন মাসে এ খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যা আগের তিন মাসের চেয়ে ৯ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা কম। একই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ প্রায় ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।

পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান : প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলোচ্য তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো টেকসই প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকগুলো সবুজ খাতে ঋণ দিয়েছে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা, যা তাদের মেয়াদি ঋণের ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। একই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ খাতে ঋণ দিয়েছে ৯৬০ টাকা, যা তাদের মোট মেয়াদি ঋণের ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বেসরকারি, বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংক এগিয়ে : প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য তিন মাসে টেকসই খাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৮১ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৬৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একই সময়ে সবুজ খাতে ঋণ দিয়েছে ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, যা তাদের মেয়াদি ঋণের ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ সময়ে শরিয়াভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো টেকসই খাতে ঋণ দিয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর সবুজ খাতে তারা দিয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা, যা তাদের মেয়াদি ঋণের ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলো টেকসই খাতে বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ২১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। একই সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলো সবুজ খাতে ঋণ দিয়েছে ১৩৬ কোটি টাকা, যা তাদের মেয়াদি ঋণের ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলো টেকসই প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ৫১ দশমিক ৬১ শতাংশ। একই সময়ে সবুজ খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে মাত্র ১ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা তাদের মেয়াদি ঋণের দশমিক ২৯ শতাংশ।