পুলিশের সামনেই ছিনতাই আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডার

ইউসুফ সোহেল
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পুলিশের সামনেই ছিনতাই আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডার

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সদর দপ্তরে পুলিশের সামনেই আউটসোর্সিংয়ে জনবল সরবরাহের টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, পিপিআর ২০০৮ সালের ৯৬/১১ ধারা লঙ্ঘন করে ডিএনসিতে আউটসোর্সিংয়ের ৩১৪টি পদে নিয়োগের টেন্ডার ড্রপিং নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, ডিএনসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বার্ষিক ১৬ কোটি টাকা মূল্যমানের এ দরপত্র ছিনতাইয়ের কাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয় মিশন সিকিউরিটি সার্ভিসের এমডি আনিসুর রহমান।

এদিকে সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব সামাল দিয়ে গতকাল নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকাদাররা টেন্ডার জমা দিতে গেলেও তাদের দরপত্র জমা না নিয়ে গোপনে আগেই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা নেয় ডিএনসি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সকাল থেকেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এক পক্ষের টেন্ডার জমা নেওয়ায় বাকি ঠিকাদাররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এসব বিষয়ে গতকাল ডিএনসি সদর দপ্তরের মহাপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের (ক্রয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনও করেন টেন্ডার-বঞ্চিত ঠিকাদাররা।

অন্যদিকে আউটসোর্সিংয়ের ৩১৪ পদের নিয়োগ আটকে থাকায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এসব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। নিয়োগ না হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যার কোনো সুরাহা করছে না।

অবশ্য এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ডিএনসির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সব নিয়ম মেনেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কয়েকজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের পর কয়েকজন ঠিকাদার আসায় তাদের দরপত্র জমা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার দপ্তরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। বাইরে কিছু হলে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাকে অবরুদ্ধ করার যে খবর চাউর হয়েছে, সেটি সত্য নয়। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের ৩১৪ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে যথাযথ নিয়মেই।

ঠিকাদারদের টেন্ডার ছিনতাইয়ের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ডিএনসির সহকারী পরিচালক (ক্রয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাকির হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে সব নিয়ম মেনেই টেন্ডার ড্রপিং ও ওপেনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু ঠিকাদার ৫ মিনিট পরে তাদের দরপত্র নিয়ে আসায় গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। টেন্ডার ছিনতাইয়ের বিষয়টি পুলিশ ও ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে।

মিশন সিকিউরিটি সার্ভিসের এমডি আনিসুর রহমান সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমার প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ কাল্পনিক। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

পুলিশর সামনেই দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে রমনা থানার ওসি আমাদের সময়কে বলেন, নির্ধারিত সময়ে না আসায় কয়েকজন ঠিকাদার তাদের দরপত্র জমা দিতে পারেননি বলে আমি অবগত। তবে কোনো টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন এ বিষয়ে ডিএনসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে থানায় কেউ অভিযোগ দেননি।

ঠিকাদারদের পক্ষে গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি এবিএস খান স্বপন বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের সময় দেওয়া হয়েছিল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা। তারা যথাসময়ে উপস্থিত হলেও তাদের ওপর হামলা চালিয়ে দরপত্র ছিনিয়ে নেয় একদল সন্ত্রাসী। সেনাসদস্যদের সহযোগিতায় নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট পর ড্রপিং বাক্সের কাছে গেলেও তাদের টেন্ডার জমা দিতে দেওয়া হয়নি। আগে থেকেই ডিএনসি কর্তৃপক্ষ একটি পক্ষকে কাজ দিতে এ কাজ করেছে। এ বিষয়ে ডিজির কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো সদুত্তর পাইনি।

স্বপন আরও বলেন, পিপিআরের বিধান অনুযায়ী ৩০ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের টেন্ডারের ক্ষেত্রেও মাল্টি ড্রপিং বক্স থাকার কথা ৩টি। কিন্তু ১৬ কোটি টাকা মূল্যের গতকালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ড্রপিং বক্স রাখা ছিল ১টি। একটি সুরক্ষিত স্থানে মাল্টি ড্রপিং বক্স রাখার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। বরং এমন স্থানে রাখা হয়েছে যেখানে সন্ত্রাসীরা অবাধে সেখানে প্রবেশ করে বাধা দিয়েছে। এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ, পরে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এলেও কোনো সুরাহা হয়নি। মিশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আনিসুর রহমান তার দলবল নিয়ে ঠিকাদারদের টেন্ডার ড্রপিংয়ে বাধা দেয় এবং ঠিকাদারদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই আনিস আওয়ামী লীগ সরকারের লোক হলেও এখন ভোল পাল্টে আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রকে মদদ দিচ্ছে ডিএনসির কিছু কর্মকর্তা।