পেট্রোবাংলার ১৫ কোম্পানিতে ১১,৬২১টি অডিট আপত্তি
বাংলাদেশ তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) আওতাধীন ১৫টি কোম্পানিতে হাজার হাজার অডিট আপত্তি চলমান। এসব অডিট আপত্তি নিয়ে আলাদা আলাদা মামলাও চলছে। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবর পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানির ক্রমপুঞ্জিত প্রায় ১১ হাজার ৬২১টি অডিট আপত্তি তৈরি হয়েছে। আর্থিক অংকে যার পরিমাণ ২ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২৭টি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, সর্বাধিক অডিট আপত্তি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২ হাজার ৩০টি। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৯৪২টি, পেট্রোবাংলার অডিট আপত্তি ১ হাজার ১৫৭টি, বাংলাদেশ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অডিট আপত্তি ১ হাজার ১১টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড কোম্পানির অডিট আপত্তি রয়েছে ১ হাজার ১১৩টি, জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির ৮৯৬টি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ১ হাজার ১টি, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির ৪৫১টি, বাপেক্সে ১ হাজার ১৪টি, মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানির ৫৪৫টি, জয়পুরহাট চুনাপাথর খনি সিমেন্ট প্রকল্পের ২৫৯টি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস
কোম্পানি লিমিটেডের ৩৪০টি, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ৩৭৪টি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৪১৬টি, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ৭২টি। জ¦ালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনিষ্পন্ন এসব অডিট আপত্তিতে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকার।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে বাপেক্সে গুরুতর অডিট আপত্তির হিসাবে মামলা চলমান রয়েছে সাতটি। ভাণ্ডারের মালামাল ঘাটতি ধরা পড়ায় সোয়া ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফলে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এ ছাড়া ১৭৯টি আইটেমের মালামাল ঘাটতি হওয়ার কারণে সাড়ে ১৭ লাখ টাকার মামলা চলমান। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে মালামাল গায়েব হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে সরকারি মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে দুইবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া সত্ত্বেও দায়ীদের বেতন ভাতাদি প্রদান করায় মামলা চলমান। কোম্পানিটিতে আরও একটি মামলা চলমান রয়েছে ভাণ্ডারের মালামাল চুরি হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ আদায় না করায়। বাপেক্সের অন্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের মালামাল ঘাটতি বা সরিয়ে নিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করা, মেডিক্যাল স্টোরে ওষুধের ঘাটতি এবং বাপেক্সের বিভিন্ন পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তা কর্তৃক ক্রয়কার্যে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল। কোনো কোনো অডিট আপত্তি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। অথচ সরকারের আলাদা একটি অডিট দপ্তর রয়েছে। তিনি বলেন, জ¦ালানি বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলোতে গত ১৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এসব কাজে অনেক অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম হয়েছে। ফলে অডিট আপত্তি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এসব অডিট আপত্তি ধরলেও নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে এগুলো চলতে থাকে বছরের পর বছর।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে যদি অডিট অধিদপ্তর সততার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণ করত, তাহলে সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম অনেক কমে যেত।