বোতলের সয়াবিন নিয়ে ডিলার-দোকানি বচসা
বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরেও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। গত মাসের শেষদিক থেকে শুরু হওয়া এ সংকট বর্তমানে তা আরও প্রকোট হয়েছে। গত সপ্তাহে অল্প হলেও পাওয়া গিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। এখন এক, দুই, এমনকি পাঁচ লিটারের বোতলও এক রকম হাওয়া। ডিলাররা বলছেন, সরবরাহ চালু রয়েছে। কিন্তু পাড়া-মহল্লার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা বারবার চেয়েও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বোতলজাত সয়াবিন তেল পেতে কোথাও কোথাও সরবরাহকারীদের (ডিলার) সঙ্গে দোকানিরা বচসায় লিপ্ত হচ্ছেন। দোকানিরা বলেন, একই কোম্পানির অন্য পণ্য কিনলে ঠিকই বোতলের তেল পাওয়া যাচ্ছে, তা অল্প হলেও। এটা নিয়েই মূলত কথা কাটাকাটি হচ্ছে সরবরাহকারীদের সঙ্গে।
গতকাল শনিবার কারওয়ানবাজারে সয়াবিনের বোতলের খোঁজে দোকান থেকে দোকানে ঘুরে ক্লান্ত মো. নজরুল ইসলাম ফরিদ আমাদের সময়কে বলেন, এলাকার দোকানে নেই। কারওয়ানবাজারের মতো বড় বাজারেও দোকান থেকে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। দুই লিটারের বোতলও নেই। হঠাৎ কেন এমন ভোগান্তি বুঝতে পারছি না। দোকানিরা বলছেন, কোম্পানি দিচ্ছে না। এটা তো ঠিক না। ভোক্তারা কষ্ট পাচ্ছেন।
জানতে চাইলে কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের ঢাকা জেনারেল স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মুজাহিদ জানান, গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরেই সরবরাহ কমিয়েছে কোম্পানিগুলো। চাহিদামাফিক দূরে থাক, অল্প করেও পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য কিছু বোতল পেলেও সেগুলোর জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। অথচ বোতলের এমআরপি আগের রেটই লেখা আছে।
এদিকে কারওয়ানবাজারের ডিলাররা দাবি করছেন বোতল সরবরাহ বন্ধ নেই। সরবরাহ চালু রয়েছে। তবে কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, যা সরবরাহ করা হচ্ছে তা স্বাভাবিকের তুলনায় খুবই নগণ্য।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুজাহিদসহ এখানকার খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে কোম্পানিগুলো যেটুকু সরবরাহ করছে, তা মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী ভাগে ১ থেকে ২ কার্টনের (প্রতি কার্টনে ৪টি ৫ লিটারের বোতল) পাচ্ছেন না, যেখানে প্রয়োজন ১০-২০ কার্টন।
মালিবাগ বাজারেও উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল। এ বাজারের বিক্রেতারা জানান, আগে সংকট ততটা তীব্র না হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে সরবরাহ নেই বললেই চলে। যদিও বা কিছু বোতল দেয়, কিন্তু তার সঙ্গে কোম্পানির অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হয়। এ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় রয়েছেন বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।
এ বাজারের খুচরা বিক্রেতা বিপ্লব স্টোরের মো. সোলেমান বলেন, বোতল একেবারেই নেই। মাঝে মধ্যে কিছু বোতল ২ কার্টনের মতো দিয়ে যায়। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা গেল দুটা আটার বস্তা, অথবা সরিষার তেল বা অন্য পণ্যও দিয়ে যায়। অন্য পণ্য না নিলে বোতল দেয় না।
একই অভিযোগ জানান, কদমতলী সাদ্দাম মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা মিলন স্টোরের মো. মিলন হোসেন। তিনি বলেন, বারবার বলার পরও বোতল পাই না। কয়েক বোতল যদি মেলে, সেটা পেতে আবার সরিষার তেল, পোলার চালের মতো কোম্পানির এইটা-ওইটা ধরাইয়া দেয়। এটা তো ঠিক না। এ নিয়ে অনেক সময় ডিলারের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়।
এদিকে বোতল সংকট তীব্র হওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যাও মিলছে না। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
একই পণ্যে বারবার একই কায়দায় অস্থিরতা তৈরি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা অনৈতিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, এমনটা নতুন নয়, আগেও তো সয়াবিনের বোতল গায়েব করা হয়েছে। আবার একই কায়দা চলছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
দাম বাড়াতেই এমন সংকট তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে রাজের হোসাইন বলেন, এখন যেটা হচ্ছে এটা ঠিক না। আমদানি হতে সময়ের প্রয়োজন। এখন যে তেল রয়েছে সেগুলো আগের কেনা। অতএব বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে এখনই দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।