শীতবস্ত্র ব্যবসায় ভাটা

রেজাউল রেজা
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শীতবস্ত্র ব্যবসায় ভাটা


প্রকৃতিতে মৃদু ঠাণ্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে রাজধানীতে শীতের আবির্ভাব ঘটেছে। এরই মধ্যে গরম কাপড়ের খোঁজে বাজারে ছুটছেন মানুষ। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শীতের কাপড়ের বাজারে ব্যস্ততা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বিক্রি সেভাবে বাড়েনি বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের। পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, স্বাভাবিকের চেয়ে এবার প্রায় অর্ধেক কম অর্ডার পেয়েছেন তারা। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। কিন্তু সেখানেও বাণিজ্যে ভাটা যাচ্ছে বলে আক্ষেপ বিক্রেতাদের। ক্রেতারা বলছেন, বিপণিবিতানগুলোয় এবার গরম কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ফুটপাতের কাপড়েও আগের বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোর চেয়ে ফুটপাতের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। একটু কম দামে পাওয়ার আশায় রাস্তার ধারে কিংবা ভ্যানের ওপর সাজানো দোকানগুলোয় ঢু মারছেন ক্রেতারা। তবে এ বছর দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তাই অনেকের কেনাকাটা কেবল দামাদামি পর্যন্তই সীমিত থাকছে। কেউ আবার সাশ্রয়ী হতে কম করে কিনছেন।

মাজার এলাকার ফুটপাতে অসংখ্য শীতের কাপড়ের দোকান। সেখানে বাচ্চার জন্য শীতের কাপড় কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আরিফুল ইসলাম। বাছাই করে ছয়টি প্যান্ট হাতে নিলেও দরদাম করে পেরে উঠলেন না। শেষমেশ তিনটি প্যান্ট রেখে দিয়ে বাকিগুলো দাম পরিশোধ করলেন তিনি। কথা হলে তিনি বলেন, বাচ্চার জন্য ফুলপ্যান্ট কিনতে এসেছি। কিন্তু আগে যে প্যান্ট ৫০-৬০ টাকায় কেনা গেছে, এবার তা ৮০ টাকার নিচে মিলছে না। ছয়টি প্যান্টের দাম চাইছে ৪৮০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে তিনটি নিলাম ২৪০ টাকায়।

পাশের আরেক দোকানে আড়াই বছরের মেয়ের জন্য ফুলহাতা জামা কিনতে দরদাম করছিলেন মো. আনিস রহমান। দাম বেশির কথা জানান তিনিও। বলেন, মার্কেটে অনেক দাম। তাই এখানে আসা। অথচ এখানেও দেখছি দাম বেড়েছে। গত বছর যে জামা ১৫০ টাকায় কেনা গেছে, এবার একই ধরনের জামা ২০০ টাকা চাইছে। ১৮০ টাকার নিচে দিতে রাজিই হচ্ছে না।

জানতে চাইলে এখানকার একজন বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, পাইকারিতে দাম বেড়েছে, দোকানের পেছনে খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে দাম একটু বাড়তি। ফুটপাতের দোকানগুলোতে এ বছর বাচ্চাদের জামা-প্যান্টের সাইজ, ডিজাইন ও কাপড়ের প্রকারভেদে ১০ থেকে ৪০ টাকা

পর্যন্ত দাম বেশি। জামা-প্যান্টের সেটগুলোতে দাম বেশি বেড়েছে। ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি এবার।

গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাচ্চাদের জামাকাপড়ের পাশাপাশি জ্যাকেট, হুডি জ্যাকেট, ফুল হাতা গেঞ্জি, সোয়েট শার্ট ও সোয়েটারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর বিক্রেতারাও জানান, এ বছর এসব পোশাকের দামও বেড়েছে।

গুলিস্তানের হুডি জামার বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, মার্কেটে দাম আরও বেশি বেড়েছে। সে তুলনায় গুলিস্তানে সামান্যই বেড়েছে। আমাদের ছোট দোকান। তার ওপর ক্রেতা খুবই কম এবার। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। বেচাবিক্রি মন্দা যাচ্ছে।

এ এলাকার মোজা-টুপি-কানটুপি বিক্রেতা মো. জাফর বলেন, শীতের তীব্রতা এখনও না বাড়ায় টুপি আইটেমের বিক্রি নেই। কিন্তু সব ধরনের মোজার বিক্রি ভালো যাচ্ছে। টুপির ধরন ও প্রকারভেদে এবার ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি। কিন্তু মোজার দাম বাড়েনি। সর্বনিম্ন ৩০ টাকাতেও এক জোড়া বিক্রি করছি।

নিউমার্কেট, টিকাটুলি ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় খোঁজ নিলে সেখানকার খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বেচাবিক্রি কম। অন্যান্য বছরের মতো এবার ডিসেম্বরের শুরুতে আশানুরূপ বিক্রি নেই।

নিউ সুপার মার্কেটের টিএস ফ্যাশনের ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, মানুষের পকেটে টাকা নেই, ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তিনটার জায়গায় মানুষ এখন একটা কিনছে। তাও বেশিরভাগ ক্রেতা ফুটপাতে ভিড় করছেন। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শীতের কাপড়ের ব্যবসা এখনও শুরু করতে পারেননি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া জানান, প্রতি বছর শীতের মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার গরম কাপড়ের বাণিজ্য হয়। মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক চাপের প্রভাবে প্রতি বছর এ বাণিজ্যের আকার কমছে। তারপরও শীতের মৌসুমকে কেন্দ্র করে ঋণ করে হলেও বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর ব্যবসা নেই বললেই চলে।

শীতের পোশাকের পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, শীতের পোশাকের বাণিজ্যের আকার বিগত কয়েক বছর ধরে কমছে। পাইকারি বাজারে সাধারণত অক্টোবরের শেষভাগ থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের প্রথম ভাগ পর্যন্ত শীতের কাপড়ের বাণিজ্যের মূল সময়। এবার সেখানে নভেম্বরের মাঝামাঝি বিক্রি শুরু হয়েছে। অর্ডার পাওয়া কমে গেছে।

গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান কমফোর্ট জোনের ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, একদিকে আর্থিক অবস্থা খারাপ, অন্যদিকে রাজধানীতে একের পর এক অস্থিরতা। এর ফলে ঢাকার বাইরে থেকে এবার অর্ডার অনেকে কম পেয়েছি। একই মার্কেটের বুসরা ফ্যাশনের পাইকারি বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, এ বছর পাইকারিতে গেঞ্জি, প্যান্ট আইটেমগুলোর দাম বলতে গেলে সেভাবে বাড়েনি। তারপরও অর্ডার প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।