সম্মুখ রণাঙ্গনে গেরিলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সম্মুখ রণাঙ্গনে গেরিলা বাহিনী

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। এই দিনে গেরিলা বাহিনী গেরিলা আক্রমণ ছেড়ে সম্মুখ রণাঙ্গনে যোগ দিয়ে যুদ্ধের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আন্তর্জাতিক মিডিয়া মুক্তিবাহিনীর এই সাফল্যের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজি রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। তবে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের কাছে হানাদার বাহিনীর সব পরিকল্পনা ব্যর্থ এবং দিশাহারা হয়ে তারা পিছু হটতে থাকে।

২ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে।

রেলস্টেশনে তখনও চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড সম্মুখযুদ্ধ। পাকিস্তানিরা এই যুদ্ধে ট্যাংক ব্যবহার করে।

এদিন মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা-সিলেট সিঅ্যান্ডবি রোডের সংযোগ এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ঢাকা রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিন দিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং অনেক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। এদিকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ শমসেরনগর বিমানবন্দর মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ দখল করে নেয়। তারা ঘোড়াশালে পাকিস্তানি সৈন্যদের শক্ত অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে একযোগে আক্রমণ করে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যকে হতাহত করে এবং বেশকিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা হানাদারদের সঙ্গে খণ্ড খণ্ডভাবে সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় ও বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও দুটি পেট্রল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। খুলনা অঞ্চলে লেফটেন্যান্ট জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রূপসা নদীর ওপারে খুলনার কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল।