সিভিল সার্ভিস থেকে বাদ যেতে পারে ‘ক্যাডার’ শব্দ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে কাঠামোগত বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ এসেছে। এর মধ্যে সিভিল সার্ভিসে ‘ক্যাডার’ শব্দটি বাদ দেওয়া এবং ‘জেলা প্রশাসক’-এর নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ করা হবে বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও কমিশনের সদস্য সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। এ সময় কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
মোখলেস উর রহমান বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন ছিল সেখানে, যেগুলো পেয়েছি আমরা প্রশাসন সম্পর্কে... অনেকেরই আগ্রহ। যেটা বিসিএস, আমরা বলি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস, এটাকে নানান কারণে মনে করা হয় ক্যাডার। ক্যাডার শব্দের সঙ্গে অনেকের একটা নেগেটিভিটি (নেতিবাচকতা) থাকে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যেসব সংস্কার প্রস্তাব দেবে এর মধ্যে একটা থাকবে যে, এই ক্যাডার শব্দটি বাদ দিয়ে যার যে সার্ভিস, সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন), সিভিল সার্ভিস (হেলথ), সিভিল সার্ভিস (এগ্রিকালচার)- এভাবে লেখা হবে। এটা একটা বড় সংস্কার বলে মনে করি, এতে অনেকের স্যাটিসফেকশন
আসবে। কমিশনের এই সদস্য সচিব বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলায় ট্যুর করতে গিয়ে যে জিনিসটা দেখলাম, মানুষ মনের কথা বলতে চেয়েছে। কয়েকটা অফিস সম্পর্কে মানুষের একেবারেই নেগেটিভ ধারণা। এগুলো আপনারা জানেন, আমি জানি, উল্লেখ করতে চাই না। তারপরও দু-একটার কথা বলতে হয়। এসিল্যান্ড ও রেজিস্ট্রি অফিস সম্পর্কে খুবই বাজে ধারণা রয়েছে। রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি এমন লেভেলে যে, কারও কোনো অভিযোগ নেই। দিচ্ছে এবং নিচ্ছে। বরং বলে আগে স্যারের চেয়ে আপনি কম নিচ্ছেন। শেয়ারিংটা খুবই সায়েন্টিফিক। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়, সেই পরিবর্তনের জন্যই এই পরিবর্তিত সরকার এসেছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে এক লাখ মানুষ অনলাইনে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। এ সময় প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এবং এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কমিশন মতবিনিময় করবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
জেলা প্রশাসক নাম পরিবর্তন হবে কি না- জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, অনেকে বলেছেন জনপ্রশাসন না বলে জনসেবা বলা যায় কি না। জেলা প্রশাসক ব্রিটিশ আমলের সৃষ্টি এবং এই শব্দের বাইরে অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে। কালেক্টর, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আছে। আমার মনে হয় নামের বিকল্প বিষয়ে সাজেশন দেবে সরকার। আর সরকার সেটাই নেবে, যেটা আপনারা চান। তিনি বলেন, মানুষের হৃদয় এবং মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনতে হবে। গত বায়ান্ন বছরে এমন ২৩টি সংস্কার কমিশন হয়েছে। কতটুকু সুপারিশ নিয়েছে আপনি-আমরা ভালোই জানি। এবার আমরা বি প্রাকটিক্যাল, মানুষের কাছে গিয়ে যতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা দেওয়ার চেষ্টা করব। যারা মিস ইউজ অব পাওয়ার অ্যান্ড পজিশন তাদের কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম এবং পিছিয়ে আছি। এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এসব লোকজনকে মেইনস্ট্রিম থেকে সরিয়ে দেব।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রশাসনের কাঠামোগত পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে জানিয়ে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলি- কাক কাকের মাংস খায় না। আমলাদের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম আমলারাই করে। আমরা কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করব। যেন এ ধরনের আবহের সৃষ্টি না হয়। তারপরও থেকে যায়, যত চেষ্টা করি না কেন, কিছু লোক থাকবে তারা চাইবে। তিনি বলেন, সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে একদিনে পরিবর্তন আনা সম্ভব না। আমরা সুপারিশ দেব।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
কমিশনের প্রধান আরও বলেন, আমরা রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং আলাদা করে গণশুনানি করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য জনসাধারণ কী চিন্তা করছেন, কী বলছেন সেটা শোনা। তবে গণশুনানিতে মানুষ একটা সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে যে, সে সন্তুষ্ট কি না? ব্যাপক সংখ্যক লোক বলেছেন ‘সন্তুষ্ট না’। তারা যে সন্তুষ্ট না, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। সন্তুষ্ট নয় বলেই তো সরকার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের অগ্রাধিকারটা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি।