নতুন ইসির যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
নতুন ইসির যাত্রা শুরু

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চার নির্বাচন কমিশনারের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে গতকাল রবিবার শুরু হলো নতুন নির্বাচন কমিশনের যাত্রা। শপথের পর সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে, এর আগে নয়।

শপথগ্রহণের পর নতুন চার কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন ভবনে আসেন সিইসি। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো মতবিনিময় করেন। এ সময় নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে- এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দীন বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না, কবে নির্বাচন হবে। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু করব। তবে ইলেকশন করার জন্য যেসব রিফর্ম প্রয়োজন, সেটা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না। ভুয়া ভোটার আছে শুনেছি; দ্বি-কক্ষ হবে (সংসদ), নাকি বর্তমানের মতোই থাকবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতানৈক্য আছে। কেউ চায় আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কেউ চায় বর্তমান পদ্ধতি। এসব বিষয়ে ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেব? নির্বাচন সংস্কার কমিশন থেকে সাজেশন আসবে। সবার থেকে পরামর্শ ইনকরপোরেট করে তারপর অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আমাদের সব প্রচেষ্টা নিবিড়ভাবে থাকবে, যাতে একটা ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচন করা যায় এবং এর জন্য সর্বশক্তি নিয়োজিত করব।

এর আগে দুপুর দেড়টায় সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শপথের পর নতুন কমিশন নির্বাচন ভবনে পৌঁছান পৌনে ৩টার দিকে। সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম ব্রিফ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুপুরের আহারের কারণে কমিশন সভাকক্ষে

আসে ৪টার দিকে। ব্রিফিংয়ের কিছুক্ষণ আগে নির্বাচন ভবনের ষষ্ঠ তলার সভাকক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও এর জোটবদ্ধ দলগুলোর নির্বাচনে আসার প্রশ্নে সিইসি বলেন, রিফর্ম কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সহযোগীদের ব্যাপারে ফয়সালা হলে বলতে পারব। এটা তো জাতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন মন্তব্য করতে চাই না।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। গঠনের পর থেকে সংস্কার কমিশন বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে সুপারিশ নিচ্ছে। ওই সব সুপারিশ যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে কমিশন।

সরকারের সংস্কার কমিশনের উদ্যোগুলো তুলে ধরে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় বারবার বলেছেন, আপনারা রিফর্মসের সুপারিশগুলো আমাকে দেন; আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসব। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলো আমরা গ্রহণ করব; যেখানে বিতর্ক হবে, কোনো কোনো দল মানবে না, সেগুলো রেখে যাব পরবর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য।

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী বলে তারা মনে করছেন- এমন প্রশ্নে সিইসি একবাক্যে বলেন, একটা ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন করা। এরপর তিনি যোগ করেন, এ কমিশন একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাসী না। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কোনো দল নাই। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নাই। আমাদের ওপর তাই কোনো রকম চাপ নেই, সামনেও কোনো চাপ থাকবে না।

এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, ভোটাররা যেন তাদের নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন, আমরা সেই পরিবেশ নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। তিনি আগের নির্বাচনগুলোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একতরফা নির্বাচন করেই তো দেশের বারোটা বেজেছে। আমরা গায়ের জোরের ইলেকশন দেখতে চাই না। চাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন এবং লেভেলপ্লেইং ফিল্ড। সেটা আমরা তৈরি করে দেব যেন সবাই খেলতে পারেন।

সিইসি বলেন, আমার জন্য এটা একটা গ্রেট অপরচুনিটি। জীবনের শেষ বয়সে এসে আমরা একটা অপরচুনিটি পেয়েছি জাতির জন্য কিছু করতে।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের অন্য কমিশনাররা হচ্ছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহ্মদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।