ডিজি নিয়োগ নিয়ে রেলে অস্থিরতা

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম
২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ডিজি নিয়োগ নিয়ে রেলে অস্থিরতা

রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রশাসন ক্যাডারদের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও ট্রেন পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকেন রেল ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। ফলে রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) পদটি সিনিয়রিটির ভিত্তিতে রেল ক্যাডারদের মধ্য থেকেই পদায়ন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি বিশেষায়িত কারিগরি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান (ডিজি) বাইরে থেকে নিয়োগের গুঞ্জন উঠেছে। তবে এমন সিদ্ধান্ত মানবেন না রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তারা আগের নিয়মে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ডিজি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিকে রেল ক্যাডার থেকে ডিজি নিয়োগ বহালের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য জোট। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাহাড়তলী প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

রেল ক্যাডারের বাইরে অন্য কাউকে ডিজি, জিএম এবং সিসিএস নিয়োগ দেওয়া হলে শ্রমিক ঐক্য জোট কঠোর আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছে।

ডিজি নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়ে রেলপথ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফকির মো. মহিউদ্দীন এবং বিসিএস রেলওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড কমার্শিয়াল অফিসার্সের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে রেলওয়েকে সরকারের একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে একই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য জোট। জোটের সমন্বয়ক এম আর মনজু স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি গত মঙ্গলবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে বলা হয়েছে-‘রেলের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন পদ্ধতি দেশের অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভিন্নতর। বিসিএস রেলওয়ে (প্রকৌশল এবং লেওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্য) ক্যাডার থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিজি নিয়োগ দীর্ঘদিনের রীতি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মহাপরিচালক (গ্রেড-১)-এর মাধ্যমে পরিচালিত। বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) এবং বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক)-এ দুই ক্যাডারের মধ্য থেকে সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান। মহাপরিচালক পদায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল থেকেই এই রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী আগামী ৮ ডিসেম্বর পিআরএল-এ যাবেন। ফলে তার আগেই মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত-কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মহাপরিচালক পদে পদায়ন করার প্রত্যাশা সবার।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাইরে থেকে ডিজি নিয়োগ দিলে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে, যা রেলের সুষ্ঠু পরিচালনায় নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করবে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনও দানা বাধতে পারে। এ ছাড়া বিষয়টি চলমান বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি বলেও মনে করছেন তারা।

ঐক্য জোটের সমন্বয়ক এমআর মনজু আমাদের সময়কে বলেন, রেল একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। ট্রেন পরিচালনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হয়। কিন্তু বাইরে থেকে ডিজি নিয়োগ হলে বুঝে উঠতেই অনেক সময় লাগবে। ফলে সুষ্ঠু ট্রেন পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে।

এদিকে রেলের এক কর্মকর্তা জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তাদের জানানো হয়েছে। তবে তারা অনুরোধ করেছেন; যাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে আসেন।