কপ২৯ সম্মেলন /
চলছে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি
সফল সমাপ্তি চায় আজারবাইজান সম্মেলন, বাড়তে পারে এক-দুদিন
আজারবাইজানের বাকুতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৯) চলছে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি। সম্মেলন ২২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির নেগোশিয়েশনের কারণে এটি এক থেকে দুদিন বাড়তে পারে। এরপরও জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের তিন-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। ফলে আশা ছিল এ সম্মেলন থেকে অর্থায়নের ইতিবাচক বার্তা আসবে। কিন্তু ধরিত্রী রক্ষায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও পদ্ধতি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দড়ি টানাটানির অবসান কীভাবে ঘটবে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
আজারবাইজান চায়, জলবায়ু সম্মেলন সফলভাবে শেষ হোক। দরকষাকষি নিয়ে আজারবাইজানের মুখ্য আলোচক ইয়ালচিন রাফিয়েভ অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। তিনি জানান, বুধবার নতুন ক্রমবর্ধিত পরিমাণগত লক্ষ্যের (নিউ কিউমিউলেটিভ
কোয়ান্টিটেটিভ গোল-এনসিকিউজি) খসড়া চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। আগামী জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিল আশা করছে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদা বাকু সম্মেলনেই সমাধান হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে বাকু জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য ফান্ড ছাড়ের দাবিতে বেশ কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ করেছে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা কম থাকায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে হওয়া ক্ষতির পূরণে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না, তাই অনুদান সহায়তা দরকার। গতকাল বুধবার বাকুতে কপ সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোলের (এনসিকিউজি) আওতায় পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন জলবায়ু অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি, অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন এবং স্বল্প সুদের ঋণের প্রস্তাব করেন। সরকারি অর্থায়নকে প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, অন্তত ২০ শতাংশ অর্থায়ন ইউএনএফসিসির (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অ্যাডাপটেশন ফান্ড) মাধ্যমে হওয়া উচিত এবং জলবায়ু অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কপ২৯ সম্মেলনে জানান, ২০২৩ সালের অ্যাডাপটেশন ফান্ড গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অভিযোজন প্রয়োজন। তবে দেশীয় উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হচ্ছে, ফলে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষয়-ক্ষতিপূরণ তহবিল এবং এনসিকিউজির অগ্রগতির ধীরগতি এবং প্রধান দূষণকারী দেশগুলোর উদ্যোগের অভাবে জলবায়ু অর্থায়ন পিছিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ওয়ারশ আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার পর্যালোচনার স্থবিরতা এবং প্রশমন কর্মসূচির অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
গ্লোবাল স্টকটেকের (জিএসটি) ফলাফলের ভিত্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই জ্বালানি অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিনগুণ এবং জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করতে প্রস্তুত। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ এবং পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এদিকে বাকু জলবায়ু সম্মেলনে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য জলবায়ু ফান্ড ছাড়ের জন্য বিক্ষোভ করেছে। এদের মধ্যে কোরিয়ার কে-গ্রিন ফাউন্ডেশন, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সংগঠন এবং আজারবাইজানের ইরাসমাস স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্য। তারা দাবি করেছে, ফান্ড ছাড়ের ব্যবস্থা না হলে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড় বন্ধের দাবি জানায় এবং জলবায়ু ফান্ডের অর্থ দ্রুত বিলি করার আহ্বান জানায়।