অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর উদ্যোগ সংশোধিত বাজেটে

আবু আলী
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর উদ্যোগ সংশোধিত বাজেটে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ‘অপচয়মূলক ব্যয়’ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিন পার হয়েছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের মূল লক্ষ্য ব্যয় সংকোচন করা। এ লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয়ের ওপর বিদ্যমান বিধিনিষেধ অব্যাহত রেখে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোর্ধিত বাজেট প্রাক্কলনের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে।

পরিপত্রে বলা হয়, শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে ভ্রমণ করা যাবে এবং সরকারি ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এখানে অব্যয়িত অর্থ কোনোভাবেই অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এ ছাড়া সংশোধিত বাজেটে কোনো মন্ত্রণালয় তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করতে পারবে না।

অন্যদিকে অর্থ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লিখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।

জানা গেছে, সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নিজ নিজ সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন নির্ধারিত ফরমে আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক, অনাবাসিক এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকবে। বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় স্থগিত থাকবে। ধীরগতি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতিসংক্রান্ত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প এবং এলাকা/অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোকে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তকরণে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়।

‘মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ শীর্ষক বাজেট পরিপত্রে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে উল্লিখিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলান সাপেক্ষে অপারেশনাল ইউনিট বরাদ্দ কমাতে বা বাড়াতে পারবে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতিমালার আলোকে সব ধরনের মোটরযান ক্রয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে ১০ বছরের পুরনো টিওআইঅ্যান্ডডিভুক্ত গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।

বাজেট পরিপত্রে সংশোধিত রাজস্ব ও মূলধনপ্রাপ্তি প্রাক্কলনের হিসাবের বিষয়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে গত দুই (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার-পাঁচ মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনায় নিতে হবে।

বাজেট পরিপত্রে সংশোধিত ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’ (এডিপি) প্রণয়নে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা এবং মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প না রাখা, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া; চলতি অর্থবছরের এডিপি-বহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করা; চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে এমন সব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্প সহায়তার অংশ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে, তবে সরকারি ব্যয়ের অংশে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।