পলাতক ঠিকাদারের সরঞ্জাম পাহারা নিয়ে বিপাকে রেল
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথ
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথ। ১৬ জোড়া ট্রেনে এই পথে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় রেলপথটি ডাবল লাইন করতে প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু করে মাঝপথে পালিয়ে যায় চায়নার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে নতুন বিপত্তি দেখা দিয়েছে ওই ঠিকাদারের ফেলে রাখা সরঞ্জাম পাহারা নিয়ে। এতদিন এসব মালামাল পাহারার দায়িত্বে ছিল প্রকল্পে নিযুক্ত পরামর্শকের জনবল। তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কারণ, ওই মালামাল পাহারার সিদ্ধান্ত জানতে রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় চাষাড়া এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহকৃত মালামালের মধ্যে আছে- রেল, সিøপার, পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং ও ফিটিংস। এসব পণ্য ছিল প্যাকেজ-১ এর নির্মাণকাজের চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়নার সংরক্ষণে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৭.৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৬.৫৬ শতাংশ। ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ায় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডের আওতায় ৬ মাসের জন্য ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মীর তত্ত্বাবধানে মালামালগুলো রাখা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের লোকবল প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, নিরাপত্তকর্মীদের ৬ মাসের বকেয়া বেতনও দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে পূর্ত প্যাকেজ ডব্লিউ-৩ এর আওতায় নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজের অবশিষ্টাংশ এবং কিছু নতুন কাজ যুক্ত করে প্যাকেজটি ঘোষণা করা হয়। এ জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর। দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) এর অনুমোদন মেলেনি এখনও।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি নানা কারণে ঝুলছে। প্রকল্পের সর্বশেষ অনুমোদিত মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। বাস্তবে প্রকল্পটি কবে শেষ হবে, বলা যাচ্ছে না। কারণ এখনও নতুন করে কাজ শুরু করা যায়নি। তা ছাড়া অ্যালাইনমেন্ট সমস্যা এখনও কাটেনি। রেলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও এলজিইডির জমি-সংক্রান্ত সমস্যা বহুদিনের। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও কার্যকর সুফল মেলেনি। আপাতত মালামাল পাহারায় করণীয় জানতে পিএসসি বৈঠকের অনুরোধ করেছেন প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম রউফ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। সেখান থেকে সিসিজিপিতে যাওয়ার কথা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ মার্চ প্রতিষ্ঠানটিকে ‘টার্মিনেশন নোটিশ’ দেয় ঠিকাদার ‘পাওয়ার কনকস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড’। যথাসময়ে চুক্তিপত্রের আওতাভুক্ত কাজের পাওনা পরিশোধ না করা, চুক্তির অতিরিক্ত কাজ এবং চুক্তিবহির্ভূত কাজের মূল্য পরিশোধ না করা এবং প্রকল্পের সাইট (আংশিক) বুঝে না পাওয়া ঠিকাদারের কাজ ছেড়ে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে রেলওয়ে। বাস্তবতা হচ্ছে- সর্বনিম্ন দরে কাজ পেয়ে বিপাকে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। লোকসানের কারণে সরে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। সময়মতো সাইট বুঝিয়ে না দেওয়া এবং বিল বকেয়া রাখার অজুহাতে টার্মিনেশন নোটিশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে জিওবি এবং ডিআরজিএ-সিএফ অর্থায়নে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ডিপিপিতে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনটি ডুয়েলগেজ রূপান্তরের বিষয়টি বাদ পড়ে তখন। ৬৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এখন প্রাক্কলিত ব্যয়। নতুন দরপত্রে ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা শেষে একটি প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ করে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থ বার বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। পঞ্চম বার ব্যয় বৃদ্ধি সম্ভব না হওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যায়নি তখন। পরে একনেকে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্মাণকাজ চলাকালে অতিরিক্ত এবং চুক্তিবহির্ভূত কাজ করানো হয়েছিল। আর প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টের চাষাড়া-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে লেভেল ক্রসিং গেট ‘টি১ থেকে টি২ পর্যন্ত ৩৩০ মিটার’ অংশে ডাবল ট্র্যাক নির্মাণে রেলের জমি কম ছিল। তাই ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দিতে পারেনি রেল। এসব কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংস্থাটি। ঠিকাদারের টার্মিনেশন নোটিশে বকেয়া পাওনা হিসেবে ১৫ কোটি ৭ লাখ ২২ হাজার ২৯২ টাকা উল্লেখ রয়েছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। তখন রেল নিয়ে ১৩টি রিট মামলা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও কোভিড ইত্যাদি কারণে ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ে। ঠিকাদার চলে যাওয়ার পর অসমাপ্ত কাজের পরিমাপ নির্ধারণ হয় গত বছরের ২৪ এপ্রিল।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম