তিন সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন আমীরের স্ত্রী
‘আমার স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার কোনো আয় নেই। আমার তিনটা সন্তান। ছোট মেয়েটা এখনও দুধ খায়। গত কয়েকদিন ধরে সন্তানদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। ওদের নিয়ে এখন কোথায় যাব, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না’Ñ চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আমীর হোসেনের (২৮) স্ত্রী আন্নী আক্তার।
আমীর হোসেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের মৌপাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ তালুকদারের ছেলে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের পাশে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা
চালিয়ে সংসার চালাতেন। আরমান (৬), আরিয়ান (৪) ও আমেনা (১) নামের তিনটি সন্তান রয়েছে তার।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জানা যায়, প্রাথমিক স্কুলের গ-ি পার হওয়ার আগেই আমীরের বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলায়ই কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান আমীর হোসেন। ২০১৬ সালে মুন্সীগঞ্জের মেয়ে আন্নী আক্তারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জুমার নামাজ আদায় করতে রামপুরা মোল্লা টাওয়ারসংলগ্ন মসজিদে যান আমীর। নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। সে সময় আন্দোলনকারী ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় তিনটি গুলি এসে তার শরীরে বিদ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান।
এ ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আমীর হোসেনের স্ত্রী।
আন্নী আক্তার আরও বলেন, স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চলত। এখন তিনি নেই। আয়-রোজগারও বন্ধ। আমি তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। কে আমার সন্তানদের দেখবে? আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবেÑ এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েছি।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
নিহত আমীর হোসেনের মা খোদেজান বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। সে পথচারী ছিল। সে কোনো দল করত না। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছিলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল! যারা আমার মতো আরও মায়ের বুক খলি করেছে, তাদের কঠিন বিচার চাই।’