জানুয়ারিতে অনিশ্চিত সব পাঠ্যবই
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বার্ষিক কর্মযজ্ঞের বড় একটি লক্ষ্য হচ্ছে প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম ক্লাসে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া। কারিকুলাম প্রণয়ন, বইয়ের পা-ুলিপি তৈরি, দরপত্র আহ্বান-মূল্যায়ন, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি শুরু হয় মার্চ-এপ্রিল থেকে। এ বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এনসিটিবির পাঠ্যবই পাল্টাতে নতুন করে কাজ শুরু করতে হয়। নতুন করে বইয়ের পরিমার্জন আর ভুলত্রুটি ঘষামাজা করতেই পেরিয়ে গেছে নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধ। ফলে পাঠ্যবই ছাপানো ও সরবরাহের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা পিছিয়ে পড়েছে।
সচিবালয়ে বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে পাঠ্যবই ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক এবং কারিগরি বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি এবং কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম দিকেই
পাঠ্যপুস্তক পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার, যেখানে ১ হাজার ৪শ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে।
জানা গেছে, পুরনো কারিকুলামের বইগুলোতে বিভিন্ন অংশে পরিমার্জন এবং সংশোধন শেষে মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিতে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই যথাসময়ে হাতে পাবে বলে আশাবাদী বই বিতরণের সরকারি এই তদারক সংস্থা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর ২০২২ সালের সমালোচিত কারিকুলাম বাতিল করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পরিমার্জিত বা সংশোধিত বই দেবে সরকার। এতে প্রাথমিকের সব বই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে তুলে দেওয়া যাবে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপানোর প্রক্রিয়া এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি। তারা বলছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মাধ্যমিকের ৫-৬টি বিষয়ের বই অন্তত ৮০ শতাংশ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রেস মালিকরা জানান, স্বল্প সময়ে বই পরিমার্জন ও সংশোধন শেষে ছাপাখানায় আসতে দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হলেও সব বই ছাপা শেষ হতে অন্তত দেড় মাস বেশি সময় লাগতে পারে।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার যে রীতি, এবার সেটি হবে না। পাঠ্যপুস্তক উৎসবের জন্য আগের বছরগুলোয় তাড়াহুড়া থাকত, সেটি এবার নেই।
বইয়ের কর্মযজ্ঞে রুটিনে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিমার্জন কমিটি প্রণয়নের পর কাজ শুরু হতে না-হতেই কমিটি বাতিলের ঘোষণা আসে। এরপর মন্ত্রণালয় আর এনসিটিবির বৈঠক চলে বারবার, পা-ুলিপি চূড়ান্ত করতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। ফলে শতভাগ পরিমার্জিত বই এবার দেওয়া সম্ভব হবে না। আগামী বছর শুরু থেকেই পরিমার্জনের কাজ করবে এনসিটিবি।
জানা গেছে, বিভিন্ন পরিমার্জন এবং সংশোধনের কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে দেরি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিবর্তিত বিষয়গুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের গল্প, পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্ধৃতি বাতিল, গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের কথা অন্তর্ভুক্ত, মূল্যবোধের বিষয় এবং গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এ ছাড়া পরিবর্তিত বিষয়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তা কাটছাঁট করে যুক্ত করা হচ্ছে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ভূমিকা। এ ছাড়া মেজর জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীসহ যার যা ভূমিকা সেগুলো যুক্ত করা হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, পাঠ্যপুস্তক প্রেসে গিয়েছে এবং ইতোমধ্যে বই ছাপা শুরু হয়েছে। ১ জানুয়ারি যেহেতু আগের মতো বই উৎসব হবে না, কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমরা সেভাবে ভাবছি না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ৫ থেকে ৬টি বই ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ ডেলিভারি পয়েন্টে চলে যাবে, সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বই পাবে। বাকি বইগুলো পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আমরা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। সবকিছু ঠিক থাকলে বিশেষত প্রেসের কাজ ঠিকঠাক চললে আশা করছি বাকি কাজও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন