ভেস্তে গেছে একক ভর্তি পরীক্ষা, গুচ্ছতেও অনীহা
পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ¯œাতক পর্যায়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ যেন ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ প্রবাদের মতো। গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি দেখানো হলেও নিয়মের মধ্যে বিরাট ফাঁক থেকে গেছে। সেই সুযোগে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে সরে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় আগ্রহী কতিপয় বিশ^বিদ্যালয়। গত বছর সব পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এবারও গুচ্ছে ভাঙনের সুর উঠেছে। তাই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষা পরিচালনায় নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উপাচার্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। কে সভা ডাকবে? কোথায় সভা হবে? পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনায় বসতে পারেননি উপাচার্যরা। এমনকি এই গুচ্ছ থেকে সরে যাওয়ারও চেষ্টা করছে কোনো কোনো বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন প্রসঙ্গে জানতে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া দুজন দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য আমাদের সময়কে বলেন, আগের কমিটি ভর্তির আয়োজনে ছিল। এখন আমরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে কে নেতৃত্ব দেবে? এখনো নিশ্চিত না।
গুচ্ছের পরীক্ষা প্রস্তুতির বিষয়ে ইউজিসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এটি (পরীক্ষার আয়োজন করা) কমিশনের দায়িত্ব নয়। বিশ^বিদ্যালয়েরই দায়িত্ব ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার। আমরা (ইউজিসি) শুধু সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
গত বছর পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ খসড়া করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিল। তবে সেটি আর চূড়ান্তরূপ পায়নি। ফলে ভেস্তে গেছে দীর্ঘদিনের আলোচিত এই পদ্ধতি।
গুচ্ছ নিয়ে দোলাচলে উপাচার্যরা : গুচ্ছে থাকা ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চার/পাঁচটি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বললে আমাদের সময়কে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে গুচ্ছ ভর্তির বাধ্যবাধকতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে কোনো কোনো বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বলেন, রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলরের অভিপ্রায় অনুযায়ী বিগত সময়ে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত ছিল, তাদের অংশগ্রহণে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় থাকার আদেশ ছিল। অথচ গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে দুর্বল ভাষা (‘সম্মত আছে’ ‘যেতে পারে’) প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের বাঁধন আঁটসাঁট দেখালেও আসলে মোটেই শক্ত নয়। ফস্কা গেরোর মতো হলো। এখন যারা সম্মত হবেন না, তারা গুচ্ছ থেকে বের হতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের একটি বিশ^দ্যিালয়ের উপাচার্য আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন সেশনে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^দ্যিালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় পরীক্ষা গ্রহণের নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এ সময় গুচ্ছভর্তির বৃহৎ কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দেবেন কে, কিছুই এখনো জানি না। কেউ কিছু বলতে পারছেন না। কোনো আলোচনা নেই।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। আরও অন্তত তিন থেকে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যেতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। ফলে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ থাকছে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো দ্বিধায় রয়েছেন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যরা।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছও আর থাকছে না বলে গুঞ্জন উঠেছে। ইতোমধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রাথমিক আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে। আর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) চলতি সপ্তাহেই ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া ১০ নভেম্বর শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। তবে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন পরিষদও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২০২১ সেশন থেকে শুরু হয় গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা। স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত ছাড়া প্রথমবার ২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু হরেও পরের বছর থেকে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে শুরু হয় এ ভর্তি প্রক্রিয়া।