দুর্বল ব্যাংককে আরও ধার দেওয়ার আহ্বান
আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি তারল্য সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার ১৭টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে ডলার মার্কেট, দুর্বল ব্যাংকের পরিস্থিতি, ক্রেডিট কার্ড রেট, রাইট-অফ পলিসি, ব্যাংকারদের বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা পরীক্ষা এবং সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়।
হুসনে আরা শিখা বলেন, যেসব ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো, সেগুলো যেন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি তারল্য সহায়তা করে সেই আহ্বান জানিয়েন গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘ডলার মার্কেট নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না, তা গভর্নর জানতে চান। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, ডলার মার্কেটে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত আরও উন্নতি হবে। বর্তমানে ডলার মার্কেটে চ্যালেঞ্জ না থাকলেও ওভারডিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ এলসির দায় পরিশোধে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু ব্যাংক এলসির দায় যথাযথ সময়ে পরিশোধ করছে না। এতে করে অন্য ব্যাংকগুলোর সমস্যা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর জানিয়েছেন, ডলার মার্কেটে কেউ যাতে ম্যানিপুলেশন না করে। কোনো ব্যাংক যাতে বেশি দরে ডলার বিক্রির জন্য ডলার ধরে না রাখে। আবার ক্রস কারেন্সিতে ট্রান্সফার করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা না করে। ভবিষ্যতে যেসব ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করবে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেগুলোকে এলসি খুলতে দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুখপাত্র বলেন, ক্রেডিট কার্ডের পেছনে ব্যাংকগুলোর অনেক খরচ। সেই অনুযায়ী সুদহার অনেক কম। তাই ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ানোর জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া রাইট-অফ পলিসি পরিবর্তন করতে বলা হয়। রাইট-অফ করার দুই বছর পর যে মামলা করা যায়, তা যেন সঙ্গে সঙ্গে করতে পারে। তবে এই বিষয়ে গভর্নর কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি। ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের একজন এমডি আমাদের সময়কে বলেন, ‘বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ডলার মার্কেটের উন্নতি হয়েছে, তা জানানো হয়েছে। যেসব দুর্বল ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও অনেক ব্যাংকের সংকট রয়েছে। যেসব ব্যাংক এখনও তারল্য সংকটে ভুগছে, তাদের তারল্য সহায়তা করার জন্য যাদের তারল্য রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে বলেছেন গভর্নর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে কিছু ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। গ্রাহকেরও আস্থা ফিরেছে। যারা এখনও সংকটে রয়েছে, তারা সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর মধ্যে আটটি ব্যাংক তারল্য-সংকটে ভুগছে। তবে ছয়টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের অনেক শাখায় নগদ টাকার লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আমানতকারীদের চাপে শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিদিনই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে ভালো ব্যাংকগুলো থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পক্ষে গ্যারান্টি দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।