জিরো পয়েন্ট ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

নূর হোসেন দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
জিরো পয়েন্ট ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

শহীদ নূর হোসেন দিবসে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে ‘নূর হোসেন চত্বরে’ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দুপক্ষের এই কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে আজ রবিবার সকাল থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল শনিবার রাত থেকেই জিরো পয়েন্ট ঘিরে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে গতকাল কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটি সামনে রেখে আজ ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দলটির প্রথমবারের মতো রাজপথের কর্মসূচি।

শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে আজ রবিবার বিকাল ৩টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীদের জড়ো হয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানায় ক্ষমতাচ্যুত দলটি। সামাজিক মাধ্যমে সবাইকে জমায়েতের আহ্বান জানালেও দলটির পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রতিরোধের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। 

এদিকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ লেখেন, গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

অপরদিকে প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই দলটির বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মতো কোনো সুযোগ নেই। ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকার বরদাশত করবে না।’

এদিকে আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে গণজমায়েতের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ রবিবার দুপুর ১২টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত ও ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের আয়োজন করবে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের এক ফেসবুক পোস্টে এ কর্মসূচির কথা জানান। তিনি লেখেন পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রবিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। তিনি দুটি বিষয়ে খেয়াল রাখার কথা বলেছেন। প্রথমত, কর্মসূচির কারণে যেন কোনোভাবেই জনদুর্ভোগের সৃষ্টি না হয় ও কোনো প্রকার সহিংসতা না ঘটে। দ্বিতীয়ত, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। হাসনাত সতর্ক করেন, আ. লীগের সন্ত্রাসীরা ছদ্মবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে ছাত্র-জনতার ওপর দোষ চাপাতে চাইবে। আ.লীগের কাউকে পাওয়া গেলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।

শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে (নূর হোসেন চত্বরে) শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবে।

এদিকে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, শহীদ নূর হোসেন দিবসে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে নূর হোসেন একটি অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে তিনি রাজপথে নেমে এসেছিলেন বুকে পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে। 

তারেক রহমান আরও বলেন, গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার এই যুবকের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল স্বৈরাচারের বন্দুক। স্বৈরাচারের বুলেট বুকে বরণ করে নিয়েছিলেন নূর হোসেন। নূর হোসেনের সে অবদান বৃথা যায়নি। তাকে হত্যার মাধ্যমে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল স্বৈরশাসক গোষ্ঠী। কিন্তু নূর হোসেনের রক্তের ধারা বেয়েই ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে, মুক্ত হয় আমাদের গণতন্ত্র। 

তারেক রহমান বলেন, ১৯৯০-এর মুক্ত হওয়া গণতন্ত্র আবার শৃঙ্খলিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে আগের রাতের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও এখনও তাদের প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্র করছে। আজকের এই দিনে আমি দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানাইÑ আসুন সব চক্রান্ত মোকাবিলা করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।