আনন্দে ভাসছে কলসিন্দুর, সানজিদা-তহুরার বাবার উচ্ছ্বাস

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩৯
শেয়ার :
আনন্দে ভাসছে কলসিন্দুর, সানজিদা-তহুরার বাবার উচ্ছ্বাস

দ্বিতীয়বারের মতো নারী সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নারীদের বিরাট এই অর্জনে উৎসবে ভাসছে পুরো দেশ। ছাদখোলা বাসে দেওয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। তবে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের উৎসবের আমেজ ছাড়িয়ে গেছে অন্য সবকিছুকে। সেই কারণও অবশ্য অজানা নয় বাংলাদেশিদের কাছে। এই গ্রাম থেকেই যে উঠে এসেছেন সাফজয়ী ফুটবলারদের বড় একটি অংশ!

কলসিন্দুর গ্রাম থেকে এবারের সাফেও খেলেছেন সানজিদা আক্তার, শিউলি আজিম, নারী ফুটবল দলের মেসিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সিধারী তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার জুনিয়ররা। এই মেয়েদের বদৌলতেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলসিন্দুর গ্রামটির নাম এখন সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। নিজেদের ঘরের মেয়েদের এমন অর্জনে উচ্ছ্বাসে ভাসছে কলসিন্দুর গ্রামসহ পুরো ধোবাউড়া উপজেলা। তাদের পরিবারেও চলছে আনন্দ উল্লাস।

জেলা শহর ময়মনসিংহ থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার গ্রামটি উন্নয়ন ও শিক্ষাদীক্ষায় এখনও বেশ পিছিয়ে। মুসলমান, হিন্দুদের পাশাপাশি এ গ্রামে বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন।মেয়েদের খেলাকে ঘিরে গত বুধবার পুরো উপজেলায় বিকাল থেকে টেলিভিশন এবং মোবাইলের দিকে নজর ছিল সব বয়সী মানুষের। বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি হাট-বাজার ও দোকানপাটে টিভির সামনে ছিল ভিড়। মেয়েদের জয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলছেন তারা।

---সানজিদা আক্তার। ছবি: বাফুফে

সাফজয়ী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো খেলায় নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে ‘

একটা সময় মেয়ে খেলাধুলা করায় মানুষ বিরূপ মন্তব্য করলেও এখন সবার মুখে মুখে সানজিদার প্রশংসা; এমন কথা জানিয়ে গর্বিত এই বাবা আরও বলেন, ‘মেয়ের জন্য আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। এলাকার অনেক নারী ফুটবলার সানিজদাকে অনুকরণ করে। সব জায়গাতেই আমাদের মূল্যায়ন বেড়েছে। তা আগে বুঝতাম না।’

তহুরার বাবা ফিরোজ মিয়া জানান, জয়ের খবর পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এরই সাথে মেয়ের অপেক্ষাই আছি। তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েরা জিতেছে, আমাদের এলাকার লোকজন একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে। গ্রামে অনেক সাংবাদিক আসছে খোঁজখবর নিচ্ছে।’

---টুর্নামেন্টজুড়ে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তহুরা। ছবি: বাফুফে

কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের কোচ জুয়েল সরকার বলেন, ‘নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলের ছয়জনই কলসিন্দুর গ্রামের। সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র; তাদের অর্জনে আজ জাতি গর্বিত।’

স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ বলেন, ‘চায়ের স্টলে বসে বাংলাদেশের পুরো খেলা উপভোগ করেছি। মেয়েরা দারুণ খেলে জয় লাভ করেছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল মেয়েরাই জিতবে। ঠিক তাই হয়েছে। মেয়েদের জেতার কারণে অবহেলিত এলাকার নামটা আবার মানুষের মুখে চলে আসছে। যে মেয়েদের জন্য আজ আমরা গর্বিত হলাম।’