পাঠ্যবইয়ে যোগ হচ্ছে জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী’ প্রবন্ধে এতদিন শেখ হাসিনা, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম ও তাদের কর্মজীবন তুলে ধরা হয়েছিল। কোনো কোনো বইয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নামও ছিল। কিন্তু কোথাও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম রাখা হয়নি। সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে গঠিত বর্তমান কমিটির সদস্যরা সেখানে এবার খালেদা জিয়ার নাম যুক্ত করছেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার একক ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম যুক্ত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই পাঠ্যবইয়ে সংশোধন আনা হয়। সব শ্রেণির বইয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশে সামগ্রিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান দেখানো হয়। বাদ দেওয়া হয় জিয়াউর রহমানের নাম। এবার সেখানে শুধু তার নাম যুক্ত হচ্ছে তা নয়; স্বাধীনতার একক ঘোষক হিসেবেও তাকে উল্লেখ করা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একাত্তরের ইতিহাসের নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা ভাসানী, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদান স্থান পাবে। তবে সেখানে স্বাধীনতার একক ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা দেন, সেটি যুক্ত করা হচ্ছে। আর ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে আদিষ্ট হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বলে উল্লেখ করা হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির একজন সদস্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যার যতটুকু অবদান সেটা তুলে ধরা হবে। কোনো পক্ষের প্রতি আমাদের অনুকম্পা নেই। কারও প্রতি বিদ্বেষও নেই। এনসিটিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার পাঠ্যবইয়ের ‘অতিরঞ্জিত ইতিহাস’ ও ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে যার যেটুকু অবদান তা সঠিকভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। তার অংশ হিসেবে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন করা হচ্ছে।
পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থাকছে, তবে তাতে অতিরঞ্জন কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে একই অধ্যায়ে মার্টিন লুথার কিং ও নেলসন ম্যান্ডেলার বিখ্যাত ভাষণও রাখা হয়েছে। বাদ যাবে একাদশ শ্রেণির বাংলা বইয়ে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘বায়ান্নের দিনগুলো’ গল্পটি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির যুক্তি, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেকের বেশি অবদান ছিল। এ গল্পে তাদের সেই অবদানের কথা বাদ পড়ছে। গল্পটি পড়লে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না। সেই বিবেচনায় লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অধ্যাপক জাফর ইকবালের ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ শিরোনামে একটি লেখা ছিল একাদশ শ্রেণির বাংলা বইয়ে। সেটিও বাদ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের সব বই থেকেও তার লেখাগুলো পুরোপুরি বাদ পড়ছে বলে জানা গেছে।
বইয়ের মলাটে হাসিনার ছবির পরিবর্তে গ্রাফিতি দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের আমলে পাঠ্যবইয়ের পেছনে শেখ হাসিনার ছবি এবং সঙ্গে তার একটি করে বাণী যুক্ত করা হয়েছিল। এবার বই পরিমার্জন ও সংশোধনে তা বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে রাখা হবে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন গ্রাফিতি। থাকবে শহীদ আবু সাঈদ-মুগ্ধর জীবনী ও ত্যাগ নিয়ে প্রবন্ধ।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়েছিল। সেখানে কিছু সংশোধন ও পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চূড়ান্তভাবে যে বিষয়গুলো আসবে, তা নিয়ে আমরা পা-ুলিপি তৈরি করে ছাপাখানা্থীদের হাতে বই দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন