ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাত উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে

উপকূলে ঝড়, সারাদেশে বৃষ্টিতে ভোগান্তি

আমাদের সময় ডেস্ক
২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাত  উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র অগ্রভাগ গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হেনেছে। এ সময় দানার কেন্দ্রে গতি ছিল ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। দানার কেন্দ্র মধ্যরাতে উপকূলে উঠে আসবে। এ সময় গতি থাকবে ১২০ কিলোমিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস এমন তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বারিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অন্যদিকে ২২ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় বর্তমানে সাগরে কোনো ট্রলার নেই।

বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, শুক্রবার দেশের সব বিভাগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হবে। তবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী এম শর্মা জানিয়েছেন, ‘দানা’র কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে উড়িষ্যার পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মাঝখান দিয়ে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। স্থলভাগে উঠের আসার পরও এটি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি নিয়ে তা-ব চালাবে। তবে ধীরে ধীরে শক্তি ক্ষয় করে শুক্রবার রাতে নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এসব এলাকায় গত বুধবার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিবেগও। এতে আতঙ্কে আছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করেছে। স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে আশ্রয়কেন্দ্রসহ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রেখেছে। ব্যুরো চিফ, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কক্সবাজার : ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সাগর উত্তাল। এর প্রভাবে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এর মধ্যেও কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করে তাদের সাগরে নামতে নিষেধ করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না পর্যকটরা। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরে ঢেউয়ের তোড়ে বার্জের ধাক্কায় উখিয়ার ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটিটি ভেঙে দ্বিখ-িত হয়ে গেছে। এদিকে বুধবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঝালকঠি : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বেলা ১১টার দিকে মাত্র এক মিনিটের ঝড়ে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় গাছ পড়ে নেছারিয়া মাদ্রাসা ও কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছে একটি গবাদি পশুও। শীতকালীন শাকসবজিও ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।

বরিশাল : বরিশালে অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চ চলাচলে এখনও নিষেধাজ্ঞা হয়নি। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৭৯৮টি মাধ্যমিক ও ১ হাজার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাগেরহাট : ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাগেরহাটে নাজুক বেড়িবাঁধ ও বেড়িবাঁধ না থাকা এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছে। বিশেষ করে শরণখোলার সাউথখালী অংশে ৫শ মিটারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এবং মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। মোংলা ও পশুর নদীর পানি স্বাভাবিক রয়েছে। নদীতে লাইটার ও ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ভোলা : বুধবার বিকাল থেকে ৫ রুট এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব রুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। এতে ভোলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৭৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কোনো তথ্যের জন্য ০১৭১৫৫৩৫৪৭০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। জেলায় ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কারণে আতঙ্কে আছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।

পিরোজপুর : পিরোজপুরে নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আতঙ্কে আছে নদী পাড়ের মানুষ। জেলায় ৫৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টের ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপির ২ হাজার ৪২০ জন সদস্য প্রস্তুত রয়েছেন।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে নদ-নদীর পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়েছে। তবে কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৮২৯টি সাইক্লোন সেল্টারসহ সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন।

নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় হেল্পলাইন চালু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০২ মেডিক্যাল টিম ও ৪৮৬ আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের অধীন সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে হেল্পলাইন নম্বরে (০১৭০০-৭১৬৬৯৬) যোগাযোগ করতে বলা হয়।

চট্টগ্রাম : সাগর কিছুটা উত্তাল থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙ্গরে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক আছে। আবহাওয়া কার্যালয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত থাকলেও চট্টগ্রামে এখনও তেমন প্রভাব নেই।

চাঁদপুর : নদীতে তীব্র ঢেউ ও ঘূর্ণি বাতাস থাকায় চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। চাঁদপুর নদী বন্দরে তিন নম্বর সতর্ক দেখাতে বলা হয়েছে।