বাফুফে নির্বাচনে তরুণ মুখ
ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। বর্তমানে তরুণদের হাত ধরেই দেশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মতো নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। সব মিলিয়ে দেশে তারুণ্যের জয়জয়কার।
আগামী ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ২০০৮ সাল থেকে বাফুফে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন কাজী মো. সালাউদ্দিন। কিন্তু এই সময়ে দেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ধস নামে। ফেডারেশনের আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ঘটেছে দুর্নীতির অভিযোগে ফিফা কর্তৃক বাফুফের কতিপয় কর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আর জরিমানার মতো নজিরবিহীন ঘটনা।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এবারের বাফুফে নির্বাচনে বিভিন্ন পদে লড়াইয়ে নেমেছেন বেশ কিছু তরুণ মুখ। সম্ভাব্য সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে দিয়েই শুরু করা যাক। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ আর ফুটবল সংগঠক পরিচয় ছাড়াও তিনি ফুটবলারও ছিলেন। ২০১২ এবং ২০১৬ সালেও বাফুফের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই তিনি বাফুফে সভাপতি হতে চলেছেন। সভাপতি পদে তার সাথে লড়াই করবেন দিনাজপুরের তৃণমূলের সংগঠক এএফম মিজানুর রহমান চৌধুরী।
বাফুফের নির্বাহী সদস্য পদে লড়াই করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এখলাসউদ্দিন,ফর্টিস ক্লাবের সভাপতি শাহিন হাসান, সাবেক নারী ফুটবলার মাহমুদা শরীফা অদিতি এবং এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন যুবায়ের। প্রত্যেকেই বয়সে তরুণ। কারও বয়স চল্লিশের নিচে। কেউবা সদ্য চল্লিশ পেরিয়েছেন। সদস্য পদে তারা নির্বাচিত হলে বাফুফেতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়বে, সন্দেহ নেই।
চুয়াডাঙ্গার এখলাসউদ্দিন জানিয়েছেন, ’সারা বিশ্বজুড়েই ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে দিক পরিবর্তনের সূচনা হয় তরুণদের হাত ধরে। আমাদের দেশেও স্বৈরাচার পতন হয়েছে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে। ফুটবলেও পরিবর্তন খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ প্রার্থী রয়েছে। সভাপতি পদে তাবিথ আউয়াল নিজেও তরুণ। ফুটবলের নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ইতিবাচক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।‘
তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে এখলাস বলেন, ’আমরা যারা জেলা কিংবা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করি, তাদের ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সরাসরি। মাঠ তৈরি থেকে গোলপোস্ট বসানোর কাজেও আমাদের সরাসরি অংশ নিতে হয়। আমি তো বলব, তৃণমূলের সংগঠকরা অনেক পারদর্শী। কিন্তু সুযোগের অভাবে উনারা ন্যাশনাল লেভেলে নিজেদের অবদান রাখার সুযোগ পান কম। আমি তো বলব, তৃণমূলের সংগঠকদের সম্পৃক্ততা জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি নিজের জেলায় অনেক টুর্নামেন্ট করেছি। অনেক সময় নানা জটিলতায় স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাইনি। কিন্তু যে কোনো মাঠে খেলা হলেও দর্শকের চাপ সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। উপজেলার কর্তারা অনুরোধ করেন, জেলার খেলা তাদের এলাকায় আয়োজন করতে। দর্শকের অভাব হবে না। আমি বলতে চাই, দেশের ফুটবলে এখনও দারুণ জনপ্রিয়। জেলা উপজেলা পর্যায়ের কর্তাদের একসুতোয় গেঁথে কাজ করতে পারলে ফুটবলের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।‘
শাহিন হাসান ফর্টিস ক্লাব পরিচালনা করছেন খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ।তার একাডেমি থেকে দেশের ফুটবলের পাইপলাইনে খেলোয়াড় উঠে আসবে , এটা তার প্রত্যাশা।
সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করা অদিতি নিজে ফুটবলার ছিলেন। বর্তমানে বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবল দলের কোচিং প্যানেলে আছেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে। অদিতি চান, বাংলাদেশের নারীরা দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে এশিয়ান লেভেলে নিজেদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
অন্যদিকে, শাহাদাৎ যুবায়ের বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টারার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা । তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলেন। বাফুফের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠ হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের ফুটবলকে দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চান।