গভীর হচ্ছে শেয়ারবাজারের সংকট
দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমছে। তাদের লোকসান বাড়তে বাড়তে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারল্য সংকট ও নতুন বিনিয়োগের অভাবে বাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তারা শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নতুনদের আকৃষ্ট করতে না পারা এবং বাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাবে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে অংশীজনের অংশগ্রহণ কমছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে সুফলভোগীরাও নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে এসেছেন।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। রয়েছে ভালো কোম্পানির অভাব। সেই সঙ্গে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণ সুবিধা (মার্জিন ঋণ) বাজারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানের পতন রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
দেশের পুঁজিবাজারের সব সেক্টরের মূল্য পতনের পাশাপাশি ধারবাহিকভাবে দুই সপ্তাহ ধরে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩.০৩ শতাংশ কমেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের আরও ক্ষতি এড়াতে গেল সপ্তাহে অংশগ্রহণ কম করেছে। তদুপরি তারা বাজারের প্রতি তাদের আস্থা হারিয়েছে। ফলে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সর্বোপরি বাজার সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। দুই বাজারেই গড়ে পয়েন্ট হারানোর সেঞ্চুরি ছিল। ব্যাংক, টেলিকম ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের শেয়ারগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীরা মরিয়া ছিল। ফলে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে গড়ে বিক্রির চাপ ছিল ৫১ শতাংশ, যার বিপরীতে ক্রেতার চাপ ছিল ৪৯ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে পাঁচ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম স্টকের বেশির ভাগ সূচকই সেঞ্চুরির বেশি হারে কমেছে। চার দিন টানা মন্দার কারণে ডিএসইর বাজার মূলধনে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা কমেছে। বিক্রেতাদের চাপ ছিল পুঁজিবাজারে। শেষ দুই দিনে গড়ে ৮০ শতাংশ ছিল বিক্রেতাদের চাপ। ডিএসইর প্রধান সূচক ১৬৪.০৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৫৪.৫৯ পয়েন্ট, এসএমই সূচক ১.৫২ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ৩১.৭৪ পয়েন্ট কমেছে। ব্লক মার্কেটে এখানে লেনদেন হয়েছে মোট ৫৮ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেযার ও মিউচুয়াল ফান্ড। আর এসএমইতে ৩২ কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে গড়ে লেনদেন টাকায় কমেছে ১৩.২৭ শতাংশ। যেখানে বিদায়ী সপ্তাহে ৩১৮ কোটি ৭০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে, আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৬ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ৪৮ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার। গেল সপ্তাহে গড়ে শেয়ার হাতবদলও কমেছে ৯.৩২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে যেখানে ১৩ কোটি ২২ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল, সেখানে বিদায়ী সপ্তাহে এক কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজারটি কমে হাতবদল হয়েছে ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দরবৃদ্ধিতে ছিল ৩৪টি, দরপতনে ৩৪৫টি, দর অপরিবর্তিত ১৭টি এবং কোনো লেনদেনে আসেনি ১৭ কোম্পানির। তবে পুরো সপ্তাহে ডিএসইতে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল মোট এক হাজার ১৭২ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে ৫২ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল মোট এক হাজার ৪৬৬ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। বিদায়ী সপ্তাহে মোট শেয়ার লেনদেন দুই কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজারটি কমে যাওয়ায় টাকায় লেনদেন কমেছে ১৯৪ কোটি ৭০ লাখ। তবে সার্বিকভাবে মূলধন ডিএসইতে কমেছে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহ শেষে মূলধন ০.৭৮ শতাংশ কমে ডিএসইর বাজার মূলধন এখন ছয় লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
আগের সপ্তাহের মতোই গত সপ্তাহেও চট্টগ্রাম স্টক মার্কেট (সিএসই) ভালো যায়নি। সব সূচকই সেঞ্চুরির বেশি হারে পয়েন্ট হারিয়েছে। সিংহভাগ কোম্পানি দরপতনের শিকার ছিল। লেনদেনেও খরা ধরেছে। সিএএসপিআই ৩১৩.৯১ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১৪ হাজার ৮২১.৪৯ পয়েন্টে, সিএসই-৩০সূচক ১৯৬.১৯ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ১২ হাজার ১০৬.২২ পয়েন্টে এবং সিএসসিএক্স ১৮০ পয়েন্ট হারিয়ে এখন ৯ হাজার ১২.৫৬ পয়েটে নেমেছে। পুরো সপ্তাহে ১১ লাখ দুই হাজার ৫৪৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৩০ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ১১০ টাকা বাজারমূল্যে। ২৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়। এদের মধ্যে দরবৃদ্ধিতে ছিল ৬৯টি, দরপতনের শিকার ২১৬৪ এবং দর অপরিবর্তিত হলো ১১টি। বাজার মূলধনে বর্তমানে এ শ্রেণির কোম্পানির ৭৭.৪৮ শতাংশ, বি শ্রেণির ৬.৭৫ শতাংশ, এন শ্রেণির কোম্পানির ৩.২৯ শতাংশ এবং জেড শ্রেণির কোম্পানির ১২.৪৮ শতাংশ অংশীদারত্ব রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ ইকবাল হাসান বলেন, আগে যেসব শেয়ার জালিয়াতি করে ইস্যু করা হয়েছে, তাতে স্টক এক্সচেঞ্জের অনেক নেতাই জড়িত। তারা কোটা নিয়েছে। পরে দাম বাড়িয়েছে। তারাই এখন সরকার ও বিএসইসিকে বিভ্রান্ত করছে। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ তার।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম