তাপসের ভয়ে ছিল রেল
বাধায় আটকে যায় রেলপথ অ্যালাইনমেন্ট ।। এক বছরেও পাত্তা নেই ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের
বাংলাদেশ রেলওয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন রেলপথ নির্মাণ। এটির অ্যালাইনমেন্ট ঝুলে আছে সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বাধার কারণে। খিলগাঁও লেভেলক্রসিং গেট থেকে মসজিদ পর্যন্ত খিলগাঁও কাঁচারাস্তা বাজারের দোকান রয়েছে, যা ফ্লাইওভারের পিয়ার পর্যন্ত অপসারণ করতে হবে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ অংশ অপসারণ
করা যায়নি। এর জেরে ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দিতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। আর কারণ সাবেক মেয়র তাপসের বাধা।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের জমিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ দোকানপাট রয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র তাপসের বাধার কারণে অপসারণ করা যায়নি। এ ছাড়া খিলগাঁও-মালিবাগ সেকশনের সাইটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্ট্রিট লাইট, ক্যাবল ও স্যুয়ারেজ অপসারণে সিটি করপোরেশনকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে রেল। কিন্তু ওই সময়ের মেয়র তাপসের কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে আত্মগোপনে থাকায় তাপসের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জানা গেছে, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ২৫০টি ট্রেন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ৯০টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চারটি লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর দুটি লাইন ও আটটি স্টেশনে ৩০ কিলোমিটার থাকবে লুপ লাইন। সব মিলিয়ে মোট ১৩৭ কিলোমিটার রেলপথ করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের অর্থছাড়ের অনুমোদন না পাওয়া। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী ডিপিপিতে ৩২২.৮৮ মিলিয়ন ডলার প্রকল্প ঋণ দরকার। কিন্তু প্রকল্পের অনুকূলে ভারতীয় এলওসি-১ ঋণের পরিমাণ ৩০১.১০ মিলিয়ন ডলার। অতিরিক্ত ২১.৭৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ভারতীয় দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। গত ১৩ মাসে কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পরও অর্থায়নের কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে এক্সিম ব্যাংক থেকে পূর্তকাজের (ডব্লিউডি-১) তৃতীয় ভেরিয়েশন অনাপত্তি প্রদান করা হচ্ছে না। এ ছাড়া পরামর্শক প্যাকেজের (এসডি-২) দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে না।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটিতে ২০২৪-২৫ সালের বাজেট বরাদ্দ ৬৪৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অর্থবছরের ব্যয় মোট ৬ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র ১ শতাংশ। ডব্লিউডি-১ এর তৃতীয় ভেরিয়েশন চুক্তি স্বাক্ষরের ছয়-সাত মাসের মধ্যে রেল, সিøপার, টার্ন আউটসহ বিভিন্ন মালামাল সরাবরাহ ও নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের দরকার। তবে নভেম্বর মাসের মধ্যে ভেরিয়েশন চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে এ বরাদ্দের পুরোটা ব্যয় করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণের, তাই ডিপিপির সংশোধনী অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ দরকার।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
রেল সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্প অনুমোদনের তারিখ ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন। সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৩৬.৫১ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ৩১.১০ শতাংশ।