মহাসপ্তমীতে দেবীকে দর্শন ও ভক্তের পুষ্পাঞ্জলি
কুমারীপূজা আজ
শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীতে দেবী দুর্গার পায়ে প্রথম পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। গতকাল সপ্তমীর সকালে পূজার শুরুতেই দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান করানো হয়। এ ছাড়া ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদানের মাধ্যমে তার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোলো উপাদানে) পূজা করা হয় দেবীর। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। এ সময় তারা মায়ের সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করেন এবং অঞ্জলি প্রদান করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সব মন্দিরেই সকাল থেকে শুরু হয় সপ্তমী পূজার এসব আনুষ্ঠানিকতা।
সপ্তমী পূজার শুরুতে নবপত্রিকা প্রবেশ। সকালে পূজা শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত-দর্শনার্থীর। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, সব ধর্মের দর্শনার্থীই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। দিনব্যাপী চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলে বলে জানিয়েছেন সর্বজনীন পূজা আয়োজকরা।
সপ্তমীর দিন বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ এবং উলুধ্বনিতে মুখরিত ছিল প্রতিটি মণ্ডপ। শিল্পীদের রংতুলির বিভিন্ন কারুকাজ ও নানা আলোকসজ্জায় উৎসবমুখর ছিল মণ্ডপ প্রাঙ্গণগুলো। ভক্তদের প্রার্থনা, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, মহাপ্রসাদ বিতরণ ও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভক্তদের সেই প্রসাদ গ্রহণ চলে দিনভর। সকালে পূজার জন্য মণ্ডপে ভিড় থাকলেও বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে প্রতিমা দর্শন। সে সময় ভোক্তাদের ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকার পূজা মণ্ডপে সপরিবারে এসেছেন বিপুল রায়। পূজা ও প্রার্থনা শেষে তিনি বলেন, বছরের মাত্র কটা দিন মাকে কাছে পাই। তাই মাকে দেখা, পূজা ও প্রার্থনার এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। এ জন্য সপরিবারে এসেছি। মায়ের পূজায় প্রতিদিনই আসব। পৃথিবীর সব মানুষের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছি। চেয়েছি দেশে যেন শান্তি বজায় থাকে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, দেশে সব ধর্মের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। কোনো সম্প্রদায়কে ধর্মীয় কারণে অত্যাচার-নির্যাতন করা যাবে না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সরকার সেটা অবশ্যই বিচারের আওতায় আনবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এবার দুর্গাপূজা সবচেয়ে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ তারিখে দশমী পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আট দফা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেভাবেই কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, ৩৬৫ দিনই দেশের মানুষ নিরাপদে থাকবে। মাঝেমধ্যে যা ঘটে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পূজাকে কেন্দ্র করে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারেÑ এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
আজ শুক্রবার শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে মহাষ্টমী। কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা ছাড়াও এদিনের অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা ও সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশনসহ বিভিন্ন মণ্ডপে কুমারীপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে হবে কুমারীপূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারীপূজা। শনিবার মহানবমী রবিবার দশমী বিহিত পূজা হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম