নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস
ডিমকে বলা হয় ‘ন্যাচারাল ভিটামিন পিল’। পুষ্টি চাহিদা পূরণে সব শ্রেণির মানুষের খাদ্যাভাসের নিয়মিতই থাকে ডিম। প্রতি বছরের মতো এবারও অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগ মুক্তি’। দেশে প্রাণিজ আমিষের সহজলভ্য উৎস এই ডিমের উৎপাদন গত এক দশকে বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই দাম বেড়ে যাওয়ায় সবার জন্য তা আর সহজলভ্য থাকছে না। নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সহজলভ্য প্রোটিনের এ উৎসটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কাজী মো. রেজাউল করিম বলেন, সব বয়সের মানুষের ডিম খাওয়া উচিত। এত সহজে এর চেয়ে ভালো প্রোটিন আর হয় না। ছোট ও সহজলভ্য এই জিনিসের মধ্যে অনেক প্রোটিন থাকে। তাই সবারই দিনে একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন মানুষের সপ্তাহে কমপক্ষে তিনটি ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৭৪ কোটি। এ হিসাবে বছরে প্রত্যেকের জন্য ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ১৩৫টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৩৭ কোটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। তার আগের অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয় মোট ২ হাজার ৫৭ কোটি, তাতে জনপ্রতি নাগরিকের ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ১২১টি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব বলছে, ২০১০ সালে প্রতি হালি লাল-সাদা ডিমের দাম ছিল গড়ে ২৫ টাকা ৩৩ পয়সা। পরের বছর তা সামান্য কমে ২৪ টাকা ৮৩ পয়সা হয়। সেই দাম বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে গড়ে ৩৫ টাকা হালি ছাড়িয়ে যায়। মহামারীর মধ্যে সাময়িক সংকটের মধ্যে তা ৫৫ টাকা পৌঁছে ছিল। গত জুলাই মাসের অধিকাংশ দিনে খুচরাবাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আগস্টেও দাম মোটামুটি এ রকমই ছিল। তবে সেপ্টেম্বর মাসে ডিমের দাম বাড়তে থাকে। মাসের শেষে এসে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। চলতি মাসে সেই ডিমের দাম ১৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
জানা গেছে, খামারি থেকে ডিম কেনে একশ্রেণির সরবরাহকারী, তাদের কাছ থেকে কেনে আড়তদাররা, তাদের কাছ থেকে ডিম যায় পাইকারি দোকানে, সেখান থেকে যায় খুচরা দোকানে; এভাবে চার হাত ঘুরে ডিমের দাম বাড়ে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ দশমিক ২৯ টাকা। সে অনুযায়ী ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা যদি ভোক্তা পর্যায়ের দাম থাকে, তবে সেটি যৌক্তিক। কিন্তু সেই ডিমের দাম পৌঁছেছে ১৫ টাকায়। এমন অবস্থায় ডিম আর মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে ডিম-মুরগির উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে শিগগিরই বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এসব সিন্ডিকেটের পেছনে সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানির হাত রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো তদারকির মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভেঙে সবার জন্য উপযোগী দাম নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্সেস অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার যৌথ উদ্যোগে আজ বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
ডিমকে বিশ্বে একটি উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে। বর্তমানে এ সংস্থার সদস্য সংখ্যা ৮০। সংস্থাটি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালনের আয়োজন করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয়ে আসছে।