ঢাকা-যশোর সরাসরি ট্রেন চালু নভেম্বরে

তাওহীদুল ইসলাম
০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ঢাকা-যশোর সরাসরি ট্রেন চালু নভেম্বরে

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নেওয়া রেলপথ প্রকল্পের নাম পদ্মা সেতু রেলসংযোগ। গত বছরের ১০ অক্টোবর রেলপথটির একাংশ চালু হয়েছে। এর ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে। এবার যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হতে পারে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয় কমছে ১ হাজার ৮৪৪ কোটিরও বেশি টাকা।

পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন এই রেলপথ চালু হলে প্রতিদিন ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। গত নভেম্বরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এখন এই পথে ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। আগামী নভেম্বরে যশোর পর্যন্ত চালু হলে কিছু যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে রেলের।

তথ্যমতে, ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ট্রিপ বাড়তে পারে। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা রুটের নকশিকাঁথা ট্রেনেরও ট্রিপ বাড়াতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ঢাকা-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-দর্শনা রুটে নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে জনবলের অভাব, ইঞ্জিনের সংকটসহ নানা কারণে তা কতটা সম্ভব এ বিষয়ে নিশ্চিত নন রেলের কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আফজাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্পের ব্যয় ৬২১ কোটি টাকা ইতোমধ্যে কমেছে। আরও ১ হাজার ২২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কমানো হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে এ প্রকল্পে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৯ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ট্রেন সুবিধা পাবে। কমবে যাতায়াত সময়।

জানা গেছে, প্রকল্পের ছয়টি কাজে ব্যয় কমছে। ডিজাইন ও সার্ভে ফি বাবদ চুক্তিমূল্য ছিল ২৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হবে ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সিগন্যালিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ৪০০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ব্যয় কমানো হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্পে প্রভিশনাল সাম হিসাবে লেভেলক্রসিং গেট, নদীশাসন, প্ল্যাটফরম শেড, ওয়াকওয়ে, ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক বাবদ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ব্যয় কমানো হয়েছে ৬৭৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট খাতে ৫ হাজার ১২ কোটি ১৮ লাখ থেকে ব্যয় কমেছে ১৩৪১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তবে ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি বাবদ ৩৩৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা থেকে বেড়েছে ৮৫৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। মালামাল পরিবহনে বেনাপোল ও মোংলা থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা রুটের দূরত্ব ৪১২.৪০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১০ ঘণ্টা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সময় কমবে ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। বর্তমানে চলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু-ঈশ^রদী-পোড়াদহ-দর্শনা রুটে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন ১৯৮.৯০ কিলোমিটার রেলপথের ফলে দূরত্ব কমছে ২১৩.৫০ কিলোমিটার। আবার ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ৩৫৬.৪০ কিলোমিটার বর্তমান দূরত্ব। পদ্মা সেতু দিয়ে ১৭৪.৩০ কিলোমিটার নতুন রেলপথের কারণে ১৮২.১০ কিলোমিটার দূরত্ব কমছে। বর্তমানে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা, নতুন রেলপথে ভ্রমণের সময় লাগবে মাত্র সোয়া ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই পথে ভ্রমণ সময় কমবে ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এর ফলে কয়েকটি নতুন রুটও চালু হবে। নতুন রুটগুলো হলো ঢাকা-পদ্মা সেতু-যশোর-বেনাপোল, ঢাকা-পদ্মা সেতু-খুলনা-মোংলা, ঢাকা-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-দর্শনা এবং ঢাকা-ভাঙ্গা-কাশিয়ানী-গোবরা।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা (৪৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার)। চীনের সঙ্গে জিটুজি (দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে চীনা সরকার দিচ্ছে ২৬৭ কোটি ডলার (মোট ব্যয়ের ৫৮ শতাংশ)। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। চায়না রেলওয়ে গ্রুপকে ব্যয় ঠিক করে দেয় সে দেশের সরকার। ঠিকাদারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে ব্যয় নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।