পূজার বাজারে ক্রেতা কম

হতাশ ব্যবসায়ীরা

রেজাউল রেজা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পূজার বাজারে ক্রেতা কম

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা আসতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। শারদীয়ার আগমনীর আমেজে পুরোদমে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। উৎসবের কেনাকাটা করতে বাজারমুখী হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার দুর্গাপূজাকেন্দ্রিক বাণিজ্য তুলনামূলক অনেকটাই কম বলে আক্ষেপ করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত শুক্রবার থেকে পূজার বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত বিক্রি নেই। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি কতটা বাড়বে, তা নিয়েও তাদের মনে জেগেছে শঙ্কা। এমন অবস্থায় হতাশায় ভুগছেন তারা।

পূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতি বছর এ সময় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যমণ্ডিত শাঁখারীবাজারের দোকানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরব হয়ে ওঠে। শাঁখা, শঙ্খ, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরদানি, ঠাকুরের মালা, কীর্তনের মালা, কদম মালা, জবের মালা, মুকুট থেকে শুরু করে শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ অলঙ্কারের দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটার ধুম। সেই সঙ্গে ঢাক, খোল, ঢোল, তাসার দোকানগুলোতেও ব্যস্ত থাকেন বাদ্যযন্ত্রের কারিগর ও বিক্রেতারা। এবার তাদেরও নেই সেই রমরমা।

দুর্গাপূজার আগেভাগেই ঢাক, মৃদঙ্গসহ আরও কিছু বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে জানান এ এলাকার ৫২ বছরের পুরনো বাদ্যযন্ত্র বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নিউ বাদ্য ভাণ্ডারের কর্ণধার অমূল্য চন্দ্র দাস। এবার বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে বলে দাবি তার। আক্ষেপ করে বলেন, সাধারণ বছর এমন সময় দৈনিক ৫০ হাজার টাকার ওপর বিক্রি থাকে। এ বছর ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জমকালো আয়োজন কম এবার। তাই বিক্রিও কম। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলা যায় না। এ মৌসুমে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হয়। সেভাবেই বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা, তাতে এবার এক লাখ টাকা বিক্রি হবে কি না সন্দেহ।

বেনারসি, মুকুট, দেবীর গহনাসহ অন্যান্য সামগ্রীর বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানান সাঝঘরের ব্যবসায়ী বরুণ দত্ত। শাঁখা, আলতা, সিঁদুর, প্রদীপসহ অন্যান্য উপকরণও বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়ের সৌমিত্র দাস। তবে ক্রেতার উপস্থিতি ও কেনাকাটার পরিমাণ দুটোই গত বছরের তুলনায় কম বলে জানান তারা।

এদিকে পোশাক ও জুতার দোকানে গত শুক্রবার থেকে ক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর টিকাটুলি এলাকার চৌধুরী শপিং মলের সানজিদা বস্ত্রালয়ের কর্ণধার মো. জাকির হোসেন জানান, পূজা উপলক্ষ্যে পোশাকের দোকানে ক্রেতার আনাগোনা সামান্য হলেও বেড়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। তবে পুজার বাজার অনুযায়ী বিক্রি অনেক কম।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার পোশাক ও জুতার বিক্রেতারাও বলেছেন, গত শুক্র ও শনিবার ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে, তবে বিক্রি বাড়েনি।

সিটি করপোরেশন মার্কেট ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, শুক্র ও শনিবার পূজার কেনাকাটা করেছেন অনেকে। তবে যে পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে, সেটাকে ভালো বলা যাবে না, মন্দের ভালো। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণেও বিঘ্ন ঘটেছে। একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না।

প্রতি বছর দুর্গাপূজা ঘিরে উল্লেখযোগ্য বেচাকেনা হয়, এবারও হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, দুুর্গাপূজার মৌসুমে আমরা ধারণা করি সব মিলিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। কিন্তু এবার এটা কতটুকু পূরণ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তবে এখনো পূজার বাজার সেভাবে শুরু হয়নি। আমরা আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে। কারণ এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠানেরও একটা বাজার রয়েছে।

এদিকে স্বর্ণালঙ্কারের বাজারে পূজার মৌসুমের প্রভাব পড়েনি বলে জানান জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় ছিল যখন পূজার মৌসুমে স্বর্ণালঙ্কারের বাজারেও ক্রেতার ভিড় বেড়ে যেত। বর্তমানে সোনার আকাশচুম্বি দামের কারণে খুব কম মানুষই স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে পা বাড়চ্ছেন।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নির্বাহী সদস্য এবং সিরাজ জুয়েলার্সের কর্ণধার দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় ধস নেমেছে। একটি ছোট্ট নাকফুলের দামই এখন ২ হাজার টাকা। আমরা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের হারিয়েছি অনেক আগেই। এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদেরও পাচ্ছি না। উচ্চবিত্ত ক্রেতারা এলেও হাতেগোনা কয়েকজন।