শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ
নীরবে রক্তক্ষরণ চলছে দেশের শেয়ারবাজারে। ফলে ধীরে ধীরে তা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ধসের পর দেশের শেয়ারবাজারে আর কখনো এত খারাপ সময় আসেনি। ক্রমাগত সূচক ও শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বস্তির খবর দিতে পারেনি। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডার সবার মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- শেয়ারবাজারে রক্ষক্ষরণ আর কতদিন চলবে, এর শেষ কোথায়?
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আশাকরি আগামী ২ মাসের মধ্যে অর্থনীতির প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়বে। শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির সংকট রয়েছে, ভালো কোম্পানি আনতে হবে। এ জন্য ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সেটি করতে সময় লাগবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। প্রধান মূল্য সূচক কমেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে ঊর্ধ্বমুখিতা ফিরে পায়। চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। পঞ্চম ও ষষ্ঠ সপ্তাহেও দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা কমেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা; আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৯৬.১৪ পয়েন্ট বা ১.৬৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
পুঁজিবাজার সংস্কার নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বসছে বিএসইসি : পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁও বিএসইসির মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএসইসি থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিএসইসির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে কমিশন। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারের রোডম্যাপ প্রস্তুতে পুঁজিবাজারের সকল অংশীজনের সঙ্গে বিএসইসি মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) শীর্ষ নির্বাহীদের মতবিনিময় সভা হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এ ছাড়া আগামী ১ অক্টোবর পুঁজিবাজারে কর্মরত ব্রোকার-ডিলারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড (এএএমসিএমএফ), অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (এসিআরএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ইত্যাদি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ, সম্পৃক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অন্যান্য সকল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসোসিয়েশন, চেম্বার, এজেন্সি এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কারের বিষয়ে মতবিনিময় সভা করবে বিএসইসি।
মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং তাদের মতামত নেবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম