আশুলিয়া ও গাজীপুরে ৩১ কারখানা বন্ধ
হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মালিক পক্ষ ও সরকার মেনে নেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া ও গাজীপুরে। গতকাল উৎপাদনে ফিরেছে সিংহভাগ কারখানা। শ্রমিক আন্দোলনসহ নানা কারণে আশুলিয়ায় ১৩(১) ধারায় আটটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। কাজ নেই মজুরিও নেইÑ ভিত্তিতে এসব কারখানার শ্রমিকরা কোনো বেতন-ভাতা পাবেন না। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণায় বন্ধ থাকা ৯টিসহ মোট ১৭টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরের ১৪টি কারখানা বাদে বাকি প্রায় সব পোশাক কারখানায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সকাল থেকে কোনো কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের খবর মেলেনি। আশুলিয়া ও গাজীপুরে সবমিলিয়ে ৩১টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, পর্যালোচনায় থাকা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবি তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন নিয়ে দুয়েকটি কারখানায় অসন্তোষ চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ আশুলিয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম। বন্ধ থাকা এসব কারখানায় কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। সংকট কাটিয়ে কবে নাগাদ না খুলে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে শিল্পাঞ্চল ঘিরে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনা সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ীর গ্রীন লাইফ কারখানায় দুই হাজার ৬০০ শ্রমিক দাবি আদায়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। একই দাবিতে জামগড়ার ফ্যাশন ফোরামের সাড়ে চারশ শ্রমিক কর্ম বিরতিতে রয়েছেন।
আশুলিয়ার অনন্ত গার্মেন্টস এবং অনন্ত স্পোর্টস ওয়্যার কারখানার ১২০ শ্রমিককে গত বুধবার সাময়িক বরখাস্তের নোটিশে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। অভিযুক্ত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের মতো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। শ্রমিকরা বলেছেন, ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের কারণেই বেছে বেছে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, যৌথ ঘোষণায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে নাÑ মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি দুঃখজনক।
তবে অনন্ত গ্রুপের এমডি এনামুল হক খান শ্রমিকদের এই দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, প্রায় তিন সপ্তাহ শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করায় ৭০ কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে। অভিযুক্তদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
অন্যদিনের মতো শ্রমিকরা কর্মস্থলে এসে কাজ শুরু করেন। সরকার ও মালিকপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ায় খুশি সাধারণ শ্রমিকরা। তবে নানা সংকট ও অস্থিতিশীলতার কারণে জেলায় বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানা গতকালও বন্ধ ছিল। শিল্প পুলিশ-২ গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সারাদিন কোথাও কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক দিনের পরিস্থিতির কারণে জেলার ১৪টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেগুলো গতকাল বৃহস্পতিবারও খোলেনি। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে এসব কারখানাও খোলা হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে প্রায় ৫০০টি। এসব কারখানায় কাজ করেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক। সম্প্রতি পোশাক কারখানার এসব শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে মালিকপক্ষ।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা করে বাড়তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আগামী অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে। আর শ্রমিকদের সব বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। এতে সন্তুষ্ট সাধারণ শ্রমিকরা।