নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, যা-ই ঘটুক, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী দেড় বছরের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের কেউ বলেছেন, এটা সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত মন্তব্য। আবার কেউ বলেছেন, নিশ্চিয়ই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই এমন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাদের ভাষ্য, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে আওয়ামী লীগের কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। সার্বিক বিষয়ে বলতে চাই ‘বিরোধ বাড়িয়ে লাভ নেই। বিরোধ যত কমিয়ে আনা যায়, ততই দেশের জন্য ভালো।’
সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই (সেনাপ্রধানের) এমন ঘোষণা এসেছে বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সেনাপ্রধান শুধু নির্বাচনের পরিবেশ হোকÑ এটাই বলেননি, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথাও বলেছেন। তার নিকট থেকে এ ধরনের
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বক্তব্য আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার ধারণা, কয়েকদিন আগে সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের সঙ্গে যে সাক্ষাৎ করেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার এই অবস্থানটা ঘোষিত হয়েছে। কারণ, একই সঙ্গে সবাইকে ধৈর্য ধারণের কথা বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটা যে পাথরে খোদাই করা ১ বছর ৬ মাসের কথা বলা হয়েছে, এমনটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে এর সময় কম-বেশি হতে পারে- সেটার ইঙ্গিত আমি দেখতে পাচ্ছি। এই বক্তব্য সময়োপযোগী। দেশবাসীরও একটা আগ্রহ যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কবে নির্বাচন দিতে পারবে বা কবে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিতে পারবে। এই প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার ধারণা, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই এমন ঘোষণা এসেছে।’
সেনাপ্রধান দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে, দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি মনে করে নির্বাচন যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই হওয়া উচিত। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, ততই জাতির জন্য মঙ্গল হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। সেজন্যই নির্বাচনের দরকার।
তবে পরিচয় প্রকাশে অনচ্ছিুক আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। সুতরাং, এই সরকার অবৈধ। কাজেই তাদের কাছে আওয়ামী লীগের কোনো প্রত্যাশা নেই। তারা কী করছে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো আগ্রহ নেই। তবে হ্যাঁ দেশের মানুষ ভালো থাকুক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, এটা আমরা চাই। কারণ, এটা মানুষের অধিকার।’
জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধানের বক্তব্য দলীয় ফোরামে পর্যালোচনা করা হবে। তবে দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, সেনাপ্রধান সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তার বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচন বিষয়ে আমাদের আমির দলের অবস্থান আগেই তুলে ধরেছেন। তিনি জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আপাতত এটুকুই এ বিষয়ে দলের বক্তব্য।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে উল্লেখ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেন, সংবিধানসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করার যে আশাবাদ সেনাপ্রধান ব্যক্ত করেছেন, তাতে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিপরীতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের এক মহান সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগকে কোনো অবস্থাতেই হাতছাড়া করা যাবে না। এরই মধ্যে সরকার কয়েকটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। কমিশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার অপেক্ষায় আছে। এদের নিকট থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পর একটি রোডম্যাপ প্রণীত হবে বলে আশা করা যায়। সে অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সবাই সর্বোতভাবে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবেনÑ মর্মে জাতি প্রত্যাশা করে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি এটা উনার ধারণা থেকে বলেছেন। উনি হয়তো মনে করছেন, এতদিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তারপর নির্বাচন হবে। উনার ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধি থেকে যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেটা বলেছেন বলে আমার ধারণা। আমি এর থেকে বেশি কিছু দেখি না।’
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা জানতে চাচ্ছিলাম নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্ল্যানটা কী। কথা ছিল নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানাবে। সুতরাং, তাদের কাছ থেকে জানতে পারলে খুশি হতাম। তারপরও সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, নির্বাচন নিয়ে উনার একটা এটিচিউড (দৃষ্টিভঙ্গি) বোঝা গেল যে, উনি কী চান। সেটা আমাদের সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে এলো। মূল কথা হলো, এই কাজটা (ঘোষণা) হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। আমরা এই কাজটা তাদের কাছে জানতে চাই। তাদের নিকট থেকে জানলেই আমরা মন্তব্য করতে পারব।’