৩ বছরেও হয়নি ২৫ ভাগ কাজ

ব্যয় বেড়েছে ৮শ কোটি টাকা

গোলাম সাত্তার রনি
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
৩ বছরেও হয়নি ২৫ ভাগ কাজ

২০২০ সালে শুরু হওয়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। কিন্তু নকশার ত্রুটির কারণে কাজের সিকি ভাগও এগোয়নি তিন বছরেও। উপরন্তু ২২ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই ব্যয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ অর্থাৎ আরও ৮০০ কোটি টাকা। এই ত্রুটির দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য গত বছর ৩১ আগস্ট কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তদন্ত রিপোর্ট। এমনকি এ বিষয়ে করা হয়নি একটি সভাও। ফলে এই প্রকল্পের কাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকায় এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাব-স্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এস্কেলেটরসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে। এই মেগা প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে; শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। কিন্তু পরবর্তীকালে সময় বাড়ানো হয়। সেই বর্ধিত সময় অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৭ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে ধরা পড়ে নকশার ত্রুটি। ফলে নতুন করে গত বছর এই প্রকল্পের নকশা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়। এ ছাড়া ত্রুটি না ধরে যারা এই নকশা বুঝে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় থেমে গেছে সব।

বর্তমানে এই প্রকল্পের খরচ ৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। ২০২৫ সালে নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বেবিচক সূত্র জানায়, ডিজাইন ত্রুটি ধরতে না পারার সঙ্গে জড়িত বেবিচক প্রকৌশলীদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিট গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় বেবিচক সদস্য (অর্থ) মো. আজিজ তাহের খানকে। কিন্তু এই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো কার্যক্রমই চালায়নি। বেবিচক সদস্য (অর্থ) মো. আজিজ তাহের খান বদলি হওয়ার পর বর্তমান সদস্য (অর্থ) এস এম লাবলুর রহমান দায়িত্ব পান। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে এখনো কিছুই অবগত নন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিমান মন্ত্রণালয় থেকে এই ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইন প্রণয়ন ও পরামর্শকের কাছ থেকে যথাযথভাবে বুঝে নেওয়া প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নামের তালিকা চাইলেও তা পাঠায়নি বেবিচক। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বহিঃবিমানবন্দর) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (প্ল্যানিং অ্যান্ড কিউএস) নামসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক। এরপরও তা পাঠানো হয়নি।

জানা গেছে, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) কাজটি করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সিভিল ডিভিশন ৩-এর অধীনে কাজ সুপারভিশন করা হচ্ছে। এই ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে বেবিচককে একাধিক চিঠি দিয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। এর আগে এই প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে ২ জন যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাদের প্রকল্প সম্পর্কিত কারিগরি দক্ষতা ও যোগ্যতা ছিল না। তারা ছিলেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাদের অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত কোনো কারিগরি জ্ঞান ছিল না।

বেবিচক সদস্য (অর্থ) এস এম লাবলুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বেবিচক চেয়ারম্যানসহ আমরা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। নির্ধারিত সময় ২০২৫ সালে কাজ শেষ না হলেও বেশি সময় লাগবে না। ছয় মাস আগে আমি এই দপ্তরে যোগদান করেছি। তদন্ত কমিটির ব্যাপারে কেউ আমাকে অবগত করেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।