অসন্তোষের মধ্যেই খুলছে ৯৮ শতাংশ গার্মেন্টস
সপ্তাহব্যাপী শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল শনিবার খুলেছে দেশের ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানা। পাশাপাশি জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৯৯.৩২ শতাংশ কারখানায়। গতকাল ২ হাজার ১০৮টি পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি কারখানা থেকে শ্রমিক বের হয়ে গেছে। প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন পরিশোধের পরও কিছু প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, আজ রবিবার থেকে আশুলিয়া অঞ্চলের সব পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। গতকাল আশুলিয়ার হা-মীম গ্রুপের ‘দ্যাটস ইট ফ্যাক্টরি’ অফিসে সেনাবাহিনী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কারখানার মালিকদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
অন্যদিকে, পোশাক কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন, যেসব এলাকায় এখনো আন্দোলন হচ্ছে তাতে শ্রমিকরা নেতৃত্ব দিচ্ছে না। অন্য একটি পক্ষ শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে। পরাজিত শক্তি দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবিপ্লব ঘটাতে চায় বলে অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের।
জানা গেছে, দেশে বিজিএমইএর সক্রিয় সদস্য পোশাক কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৫২টি। এর মধ্যে গতকাল খোলা ছিল ২ হাজার ১০৮টি। অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। এদিন কারখানা বন্ধ ছিল ৪৪টি অর্থাৎ ২ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জানা গেছে, গতকাল গাজীপুর এলাকায় কারখানা খোলা ছিল ৮৮২টি। বন্ধ ছিল ১টি। অর্থাৎ ৯৯.৮৯ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। সাভার-আশুলিয়া এবং ধামরাই এলাকায় খোলা ছিল ৪০৮টি। বন্ধ ছিল ৪৩টি। সে হিসাবে খোলা ছিল ৮৯.৪৬ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শতভাগ কারখানা (২০৯টি) কারখানা খোলা ছিল। ঢাকা মেট্্েরাপলিটন (ডিএমপি) এলাকায়ও সব কারখানা (৩০২টি) খোলা ছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম এলাকায়ও (৩৫০টি) শতভাগ কারখানা খোলা ছিল।
গতকাল নাসা গ্রুপের ৫টি এবং নিট এশিয়া লিমিটেড, ইয়াগি বাংলাদেশ লিমিটেডে, পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড, ইউফোরিয়া, জন রোন সোয়েটার ও নিওএজ গ্রুপের ৪টি কারখানা বন্ধ ছিল।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, পোশাক কারখানা মালিকরা সব কারখানাই চালু রাখতে চান। কারণ কাজ বন্ধ থাকলে ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী পণ্য পাঠানো যাবে না। এতে ক্রেতা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের প্রায় শতভাগ বেতন (জুলাই মাস) দেওয়ার পরও কারা এই অসন্তোষ সৃষ্টি করছে তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত নয়। বহিরাগতরা এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
শ্রমিক দলের সমম্বয়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেয সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গতকাল বলেছেন, অনেক চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী আবার সক্রিয় হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। পরে দেখা যায় এরা বিএনপির কেউ নয়। ধরা পড়ার পর তদন্তে দেখা যায় যুবলীগ অথবা ছাত্রলীগ। বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজ এবং দখলবাজের স্থান নেই। গতকাল বিকালে দখল-চাঁদাবাজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শিল্পকারখানায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে ঢাকা জেলা শ্রমিক দল আয়োজিত আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে শ্রমিক-কর্মচারী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, পরাজিত শক্তি দেশে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবিপ্লব ঘটাতে চায়। ওই মহল বিএনপির সুনাম নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যদি অপকর্ম করেন, জানমালের জন্য হুমকি হন, তা হলে যত বড় নেতাই হোক; ছাড় পাবেন না।