জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর হবে গণভবন
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট দুপুরে গণভবন ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গণভবনে ঢুকে বিজয়-উল্লাস করেন। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন পর্যন্ত গণভবনেই বাস করতেন শেখ হাসিনা।
গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটা ছিল বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠক। এ বৈঠকেই গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণভবন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়-অবিচার হয়েছে তার সব কিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন যে অবস্থায় আছে, জনগণ যেভাবে রেখেছেন সে অবস্থায় রাখা হবে। এর মধ্যে ভেতরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আজকের (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আসিফ মাহমুদ বলেন, সাউথ কোরিয়ায় এমন স্মৃতি মেমোরিয়াল করা হয়েছিল। আরও অন্য দেশেও হয়েছে। তাদের থেকে জেনে গণভবনকে স্মৃতি জাদুঘর করা হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হবে।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, তারা রাজনীতি করতে পারবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত জনগণের। যেহেতু আওয়ামী লীগ গণহত্যা ঘটিয়েছে, সে দায় মাথায় নিয়ে দলটি কীভাবে ফিরবে, সেটা জনগণের সিদ্ধান্ত। তাদের ওপরেই এই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছি।
এ সময় উপদেষ্টা রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ে সব কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও কোচকে অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ছিল ‘গণভবন’। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলানগরের এই বাসভবনে থাকেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শেরেবাংলানগরে বর্তমান গণভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে অফিস শুরু করেন। তবে তিনি বাস করতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর সামরিক শাসন জারি হলে গণভবনকে পরিণত করা হয় সামরিক আদালতে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে অফিস করতেন বঙ্গভবনে, বসবাস করতেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে।
এইচএম এরশাদ সামরিক শাসক এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করতেন। খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি থাকতেন ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবনে। এভাবে অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গণভবনে বাস করা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গণভবনেই ৫ বছর ছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে প্রতীকী মূল্যে বাড়িটি তার জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। গত ১৫ বছরে গণভবনেই ছিলেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণভবনের জায়গায় গণহত্যা মিউজিয়াম তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৫ বছরের অনাচার-অবিচার জনগণকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রীয় স্থাপনা গণভবন ছিল দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী স্মারক। গণভবন বর্তমানে স্বৈরাচারী হাসিনার দুর্নীতি দুঃশাসন, অনাচার, অপকর্মের প্রতীক। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে এই গণভবনকে গুম-খুন-অপহরণ এবং গণহত্যার মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।