৫০ প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ২৫০০ কোটি টাকা

আব্দুল্লাহ কাফি
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
৫০ প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ২৫০০ কোটি টাকা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা ও অন্যান্য খাতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ক্ষতির হিসাব পাঠানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতে। ওই হিসাবে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনো। এই সংকট কাটাতে দ্রুত কারখানা সংস্কার করে কার্যক্রম চালু করার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বীমাকৃত কারখানাগুলোর প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু আমাদের সময়কে বলেন, দেশ বাঁচাতে হলে শিল্প-কারখানা বাঁচাতে হবে। কোনো শিল্প-কারখানার মালিক অপরাধ করলে তার বিচার হবে। অপরাধ করলে সে দায় ব্যক্তির, শিল্প-কারখানা অপরাধ করেনি। শিল্প-কারখানা দেশের সম্পদ। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান জড়িত।

তিনি বলেন, যেসব কারখানা সংস্কার করা যায়, সেগুলো দ্রুত সংস্কার করে চালু করতে হবে। ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে আন্তরিক হয়ে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, যেসব কারখানা আক্রান্ত হয়েছে সেগুলোর সঠিক তথ্য বের করার পাশাপাশি কত কর্মসংস্থান ছিল, তারও তথ্য-প্রমাণ বের করা উচিত।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার অবস্থা সরকারের নেই। বর্তমানে নগদ অর্থ দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার অন্যান্য সহযোগিতা করতে পারবে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করতে পারবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই সংকটকালে বীমা কোম্পানিগুলোকে পাশে দাঁড়াতে হবে। দ্রুত দাবি পূরণ করে সহযোগিতা করতে হবে, যাতে কারখানাগুলো উৎপাদনে যেতে পারে।

এদিকে ক্ষতিক্ষতির হিসাব চেয়ে এফবিসিসিআই দেশের বিভিন্ন চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চিঠি দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, শিল্প-কারখানা ধ্বংস হলে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শিল্প-কারখানায় ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ফলে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক খবর যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যেসব কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে, সেসব কারখানায় হাজার হাজার মানুষ কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শ্রমিকরা পথে বসে যাবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের অনাহারে থাকতে হবে। এসব মানুষের কী হবে, সে চিন্তা থাকা দরকার। শিল্প-কারখানা ভালো থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে। অর্থনীতি বাঁচবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, দেশের শিল্প-কারখানা নষ্ট হলে সামগ্রিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। দেশের স্বার্থেই শিল্প-কারখানা বাঁচানো উচিত।

এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে। পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশে নতুন অস্থিরতা তৈরি হবে। সাধারণ মানুষ আরও দুর্ভোগে পড়বে।

তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা ধ্বংস করে দেশের সম্পদ নষ্ট করার অর্থ হয় না। দেশের স্বার্থে শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যেসব কারখানা চালু করা সম্ভব সেগুলো সংস্কার করে দ্রুত চালু করা এবং শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত। বীমার দাবি জমা পড়লে দ্রুত নিষ্পত্তি করে দিলে কারখানা মালিকরা দ্রুত উৎপাদনে যেতে পারবেন।

বিজিএমইএ-এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বার বার অস্থিরতায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক খবর যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে মালিকদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। এর সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক বিপদে পড়বে। চাকরিহারা হয়ে পড়বে। পরিবারগুলো পথে বসে যাবে।

সম্প্রতি সাভারের আশুলিয়ায় পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অনেক কারখানায় ভাঙচুর ও লুটতরাজ হয়। নারায়ণগঞ্জে তিনটি পোশাক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ছাড়া বেঙ্গল গ্রুপের কারখানায় এবং হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেডের গাজীপুরের কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

গত ২৫ আগস্ট রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগে। জানা গেছে, ৫ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে রূপসীর গাজী টায়ার এবং কর্নগোপে অবস্থিত গাজী ট্যাংক, গাজী পাম্প, গাজী ডোর, গাজী পাইপ- এসব ফ্যাক্টরিতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বিকাল থেকে পুনরায় গাজী টায়ারে ৫০০-৭০০ দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা ও লুটপাট শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা টায়ার ফ্যাক্টরির দ্বিতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। রূপগঞ্জে অবস্থিত গাজী গ্রুপের পাঁচটি কারখানায় ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। একসঙ্গে তারা বেকার হয়ে পড়েছেন।