অসহায় মানুষের পাশে পিএইচপি ফ্যামিলি
কারখানা বন্ধ রেখে বানভাসিদের আশ্রয়
বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে তিন দিন বাড়িতেই ছিলেন ফজলুল হক (৮১)। তার বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ার নাঙ্গলমোড়া গ্রামে। ঘরের ভেতর ৫-৬ ফুট পানি ওঠায় গত শুক্রবার বিকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেন পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের নির্মাণাধীন ডরমিটরিতে। ফজলুল হক বলেন, পা ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে পারি না। ঘরে পানি ওঠার পর ছেলেরা পাশের মসজিদের দোতলায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে শুক্রবার উদ্ধার করে পিএইচপির স্বেচ্ছাসেবকরা স্পিডবোটে করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত পিএইচপির এই কারখানাটি ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন অবস্থিত।
ফজলুল হকের মতো বন্যায় আটকে পড়া অন্তত ৭০০ মানুষকে উদ্ধার করে কারখানায় আশ্রয় দিয়েছে পিএইচপি ফ্যামিলি। বানভাসিদের জন্য মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কারখানাটি। কেন্দ্রটিতে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের তিন বেলা খাবারেরও ব্যবস্থা করছে পিএইচপি। অফিস কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্প। দেওয়া হচ্ছে ওষুধসহ যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। অফিসের দুটি কক্ষ নৌবাহিনীর সদস্যরা কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করছেন। মিলের তিন শতাধিক কর্মী আশ্রিতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখনো পিএইচপির শতাধিক কর্মী দিন-রাত ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও।
ফেনী জেলার ছয় উপজেলা বুধবার থেকে পানির নিচে তলিয়ে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তারা আশ্রয়কেন্দ্রের সন্ধানে ছুটছেন। এর মধ্যে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসায় প্রশংসায় ভাসছে পিএইচপি ফ্যামিলি। তারা নিজেদের কারখানা খুলে দিয়েছে বন্যাদুর্গতের জন্য।
পিএইচপির আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার থেকে অবস্থান করছেন দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিংহনগর এলাকার বাসিন্দা ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ি ভেসে যায়। আশ্রয় নিই প্রতিবেশীর বাসার ছাদে। এক দিন কিছুই খেতে পারিনি। চারদিকে পানির মধ্যে বেঁচে থাকব কিনা সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। শুক্রবার ত্রাতা হয়ে পিএইচপির একটি বোট এলাকায় ঢোকে। পরে উদ্ধার করে এই কারখানায় নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। পিএইচপি আমাদের জন্য তিন বেলা খাবার, দুই বেলা নাশতার ব্যবস্থা করছে। আমার বৃদ্ধ মাকে নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্দিনে এমন সেবা পেয়ে আপ্লুত তিনি।
এক কাপড়ে ছাগলনাইয়ার আদর্শপাড়া গ্রাম থেকে এসেছেন তাহমিনা আক্তার। ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসেন এই নারী। স্বামী ও আরেক ছেলে এখনো আদর্শপাড়ায় পানিবন্দি রয়েছে। গত দুদিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তাহমিনা। তিনি বলেন, স্পিডবোটে জায়গা কম থাকায় স্বামী আর বড় ছেলে আসেনি। তারা কোথায় জানি না। সড়ক থেকে পিএইচপির স্বেচ্ছাসেবকরা এই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। পিএইচপি থেকে খাবার ও কাপড় দিয়েছে।
কাটা পশ্চিম জোয়ারের বাসিন্দা নুরের নাহার বলেন, আমি কিডনি রোগী। দুদিন পানিবন্দি ছিলাম। শারীরিক চেকআপ করতে পারিনি। এখানে আসার পর ডাক্তার এসে নিয়মিত চেকআপ করছেন। ওষুধও দিচ্ছেন তারা। পিএইচপি ফ্যামিলির জন্য মন থেকে দোয়া করছি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
শনিবার সন্ধ্যায় চারজনকে উদ্ধার করে পিএইচপি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা সবাই নাঙ্গলমোড়া এলাকার বাসিন্দা। তাদের একজন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, কিছু নেই ভাই। সব ভেসে গেছে। তিলে তিলে গড়া আমার ভিটাও নেই। দুদিন পানিবন্দি ছিলাম। আর পারছি না। পিএচইপির স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
আশ্রয়কেন্দ্রের সমন্বয়ক বিন্দুনাথ বলেন, বানভাসিদের সেবা দিতে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ৭০০ জন বন্যাদুর্গত মানুষ কারখানায় আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের তিন শতাধিক শ্রমিক তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পিএইচপির পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও শুকনো খাবার সরবরাহ করছি। আশ্রিতের সেবায় মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। যত দিন বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না তত দিন বানভাসিদের জন্য আমাদের কারখানা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের সব ধরনের সেবা চলমান থাকবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম