কাবুলে পিতার সঙ্গে লড়াইয়ে পুত্রের জয়
একই ম্যাচে পিতা-পুত্র এক সঙ্গে। এমন দৃশ্য ক্রিকেট বিশ্বে বিরল ঘটনা। আড়াই বছর আগে এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল পিতা মোহাম্মদ নবি ও পুত্র হাসান ইসাখিলের। দুজন একই দলে খেলেছিলেন। কিন্তু পরশু কাবুলে আফগাস্তিানের ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্টে দুজন হয়ে উঠলেন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী!
স্পাগিজা ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে অন্যরকম ম্যাচটিতে জয় হয়েছে পুত্র ইসাখিলের। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১২৯ রান করে নবির দল মিস আইনাক নাইটস। জবাবে ৫ উইকেট ও ১৯ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইসাখিলের স্পিন ঘর টাইগার্স (১৩০/৫)।
রোমাঞ্চকর ম্যাচটিতে অবশ্য পিতা-পুত্র দুজনই নিষ্প্রভ ছিলেন। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি আফগান অলরাউন্ডার নবি। আর ওপেনিংয়ে নেমে ৮ বলে ১০ রান করেছেন ইসাখিল। ইনিংসে একটি করে চার-ছক্কা মেরেছেন তিনি। যদিও তার ব্যর্থতায় স্পিন ঘর টাইগার্সের জয় আটকায়নি।
অবশ্য এবার প্রতিপক্ষ হলেও পুত্রের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করার অভিজ্ঞতা হয়েছে নবির। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিবিএফএস টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে বুখাতির হয়ে খেলেছেন নবি-ইসাখিল। এবার ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দুজন হলেন মুখোমুখি।
ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো একসঙ্গে দেখা যায়নি কোনো পিতা-পুত্রকে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন দৃশ্য কয়েকবার দেখা গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছেলে ত্যাগনারায়ণের সঙ্গে খেলেছিলেন পিতা শিবনারায়ণ চন্দরপল। ক্যারিবীয় কিংবদন্তির স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলেও পুত্রের সঙ্গে খেলা। কিন্তু তার স্বপ্নপূরণ হয়নি। আক্ষেপ সঙ্গী করেই অবসরে যেতে হয়েছে চন্দরপলকে।
৪০ বছর ছুঁই ছুঁই আফগানিস্তান অলরাউন্ডার নবিও বড় স্বপ্ন দেখছেন। তার ছেলে গত মাসে ১৮ বছর পূরণ করেছেন। সবশেষ দুটি ম্যাচ বাদ দিলে স্পাগিজা ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে ভালোই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার পথ মসৃণ নয়। সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে ইসাখিলকে। নবি অবশ্য আশাবাদী ছেলেকে নিয়ে। ইসাখিলের উন্নতি দেখতে পারছেন তিনি।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা সহজ নয়। সেই বার্তাটা ছেলেকেও দিয়ে রেখেছেন নবি, ‘আমি ওকে বলেছি, কাজটা কঠিন। আমার নামের কারণেই চাপে থাকবে তুমি। কঠোর পরিশ্রম করো, নিজের প্রতিভা আরও পরিশীলিত করো। সবাই বলবে, তুমি মোহাম্মদ নবির ছেলে। এটা আমার নয়, তোমার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’
জাতীয় দলের আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ইসাখিলের সুযোগ পাওয়াটা জরুরি। এখন পর্যন্ত ওই পর্যায়ে যেতে পারেননি তিনি। যদিও আড়াই বছর আগে তাকে নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিলেন নবি। মধ্যপ্রাচ্যের একটি সংবাদমাধ্যমকে আফগান অলরাউন্ডার বলেছিলেন, ‘হাসান আরও উন্নতি করবে। আশা করি আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলবে সে। আশা করি জাতীয় দলেও খেলবে। কোনো প্রতিষ্ঠিত টুর্নামেন্টে এই প্রথম আমরা একসঙ্গে খেললাম, ভালো লাগছে। ওর প্রতিভা আছে। আমার আশা আমরা দুজন একসঙ্গে খেলব এবং একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলব। আফগানিস্তান দলে আরও কয়েক বছর খেলতে চেষ্টা করব এবং আরও কয়েক বছর লিগগুলোতে খেলার চেষ্টা করব।’