ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

আকস্মিক বন্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারসহ ৮ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের জীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যেসব অঞ্চল এখনো পানির নিচে তলিয়ে যায়নি, সেসব অঞ্চলও ডুবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আবার ভারতবিরোধী স্লোগান উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশ^বিদ্যালয়ে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা আকস্মিক বন্যার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতকেই দায়ী করছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘পানি আগ্রাসন’ চালাচ্ছে ভারত। আন্তর্জাতিক নদীর পানির নায্য হিস্যার দাবিও তুলেছেন তারা। তবে ভারত সরকার এ বন্যার দায় এড়িয়ে অতি বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বেশ কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে আকস্মিক বন্যার জন্য ভারতের বাঁধ খোলাকেই দায়ী করছেন তারা। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, এই অনাকাক্সিক্ষত বন্যার অবস্থা এতটাই করুণ যে, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই বন্যা মানবসৃষ্ট। বাঁধ হঠাৎ করে খুলে দেওয়ার আগে ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশকে জানানো। তারা এখানে দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে। পরিস্থিতি যে এ রকম কন্ট্রোলের বাইরে চলে যেতে পারে তার তথ্য নিশ্চয় তাদের কাছে ছিল। তাহলে তারা আগে থেকে বিষয়টি জানায়নি কেন?

আকস্মিক বন্যাকে রাজনৈতিক দুর্যোগ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আমরা ভয় পাই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যেই দুর্যোগ হয়Ñ সেটা আরও ভয়ংকর। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, যে পানি বণ্টন চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, সেটা হিসাব করে ন্যায্য হিস্যা আমাদের পেতে হবে। খরার সময় আমরা মরব, আর এই সময়ে এসে আমার গর্ভবতী মা মরবে, বুক পানিতে দাঁড়িয়ে থাকবেÑ এগুলো আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক শিকদার বলেন, আমরা সবাই একত্র হয়েছি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আর কোনোদিন তিস্তা ব্যারেজ ও ফেনীর ডম্বুর ব্যারেজ যদি খুলে দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সেটাকে রুখে দেবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সকল আগ্রাসন রুখে দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এদিকে কয়েকটি জেলাকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেলার প্রতিবাদে এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাগুরায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, মাগুরা জেলা শাখা। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এলাকায় গতকাল দুপুরে উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

এর আগে, গত বুধবার রাতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঢাবি শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন জবি শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে রাবি, শাবিপ্রবি, বেরোবি, ববি, নোবিপ্রবিসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বন্যায় যদি মানুষ মরে সেভেন সিস্টার থাকবে না রে’ ইত্যাদি সেøাগান দেন।