সামিটের এলএনজি টার্মিনাল তিন মাসেও সচল হয়নি
প্রায় তিন মাস হতে চলেছে সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন বেসরকারি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরহ করা যাচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে ভাসমান ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় দেশে গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশে এমনিতেই গ্যাসের সংকট রয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকার ফলে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জ¦ালানি বিভাগকে। সামিট গ্রুপ থেকে কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও টার্মিনালটি সচল করতে পারেনি। এ অবস্থায় সামিট গ্রুপকে কড়া চিঠি দিয়েছে জ¦ালানি বিভাগ।
সর্বশেষ গ্রুপটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া ও সমুদ্র পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে আগস্টের শেষ নাগাদ ডিসকানেক্টেবল টারেট মুরিং (ডিটিএম) প্লাগ পুনঃস্থাপন ও পুনঃসংযোগ সম্পন্ন করা হবে। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।
এদিকে কয়েক দফা সময় দিয়েও সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ করতে না পারায় ক্ষুব্ধ জ¦ালানি বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, গত ২৬ মে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সেটাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মেরামত করতে। এর পর সামিট গ্রুপ থেকে জ¦ালানি বিভাগকে কয়েকবার চালু করার কথা বললেও তা পারেনি। তিনি বলেন, বিগত সরকারের কাছে সামিট অত্যন্ত প্রভাবশালী কোম্পানি হওয়ায় তারা যেভাবে বলত, আমাদের সে রকমই কাজ করতে হয়েছে। ফলে সামিটের বিরুদ্ধে যৌক্তিক পদক্ষেপও নিতে পারত না সরকার। সামিট যেভাবে চাইত বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিভাগকে সেভাবেই কাজ করতে হতো।
এই কর্মকর্তা বলেন, দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি সামিটের। প্রায় তিন মাস ধরে বিকল থাকা অত্যন্ত অস্বস্তিকর। তবে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সামিটকে চুক্তির বিভিন্ন ধারা ও উপধারা উল্লেখ করে চিঠি দিতে। যাতে খামখেয়ালি করার
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সুযোগ না পায়। এ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে সামিটের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জ¦ালানি বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম বলেন, পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছে সামিটকে চিঠি দিয়ে দ্রুত বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিতে। তা না হলে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জ¦ালানি বিভাগ।
এদিকে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গতকাল রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিসিএল) লিমিটেডের পক্ষ থেকে সামিট গ্রুপকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সামিট গ্রুপের বিকল টার্মিনাল সচল করার যে প্রক্রিয়া, সেটা অদক্ষতার পরিচয়। টার্মিনালটি দীর্ঘসময় বিকল থাকায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। ফলে সামিটকে একদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে, কবে নাগাদ টার্মিনাল মেরামত করে পুনঃস্থাপন করা যাবে। সামিটের পরিকল্পনা একদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, টার্মিনালের মেরামতের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির অভাব লক্ষ করে যাচ্ছে, যা হতাশাজনক। এলএনজি টার্মিনাল বিকল হওয়ায় বিদ্যুৎ, সার এবং শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
দেশে গ্যাসের সংকট মেটাতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রথমবার ২০১৮ সালে কক্সবাজারে একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। পরে আরেকটির অনুমোদন পায় সামিট গ্রুপ। প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়, যার মাধ্যমে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব। সামিট ছাড়া অপরটি হলো সিঙ্গাপুরভিত্তিক মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের। সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দেশের জ¦ালানি খাতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো সাগরে ভাসমান সামিট পাওয়ারের একটি এলএনজি টার্মিনাল। এতে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়।
জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে কেনা চারটি এলএনজি কার্গোর সরবরাহ আদেশও বাতিল করতে হয়েছে গত জুলাই মাসে। তখন বলা হয়, কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনালটি সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত হয়ে না আসা পর্যন্ত এলএনজির স্পট মার্কেট থেকে নতুন করে কার্গোর আর সরবরাহ নেওয়া হবে না। কারণ এলএনজি দেশে এলেও সেটা সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
জানা গেছে, সামিটের টার্মিনালটি রিমালের আঘাতে গত ২৬ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। এর পর টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরে নিয়ে মেরামত করে দেশে আনা হয়। দেশে আনার পর আবার দুর্ঘটনায় বিকল হয়ে যায়, যা এখন পর্যন্ত সচল করা সম্ভব হয়নি। ফলে শুধু এক্সিলারেটের টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
সর্বশেষ সামিট জানিয়েছে, ডিটিএম হস্তান্তরে একটি শক্তিশালী ও উচ্চতর ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেনের জন্য সামিট ওরিয়েন্টাল ড্রাগন নামে একটি ডাইভিং সাপোর্ট ভেসেলের (ডিএসভি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এটি আগামী ২২ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে মহেশখালীতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সামিট ও এর আন্তর্জাতিক অংশীদাররা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান বজায় রেখে এলএনজি টার্মিনালের কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেডের এফএসআরইউ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (টাইম চার্টার) ইজারা নিয়েছে, যারা এটির মালিক ও পরিচালনার দায়িত্বে আছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। প্রথমে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহ করে সরকার। পরে ২০১৯ সালের এপ্রিলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সামিটের এফএসআরইউ।