বিদেশি পাঁচ শেয়ারধারীর তথ্য যাচাই হচ্ছে
লাইসেন্স দেওয়ার তিন মাস না যেতেই নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হলো ব্লু হেভেন ভেঞ্চার এলএলসি, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার এলএলসি, জেন ফিনটেক এলএলসি, ফিনক্লুশন ভেঞ্চার পিটিই লিমিটেড এবং ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি। সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসিনা সরকার পতনের পর নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ও ঠিকানা/অবস্থান, প্রতিষ্ঠান গঠনকালীন মালিকানা কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, বর্তমান মালিকানা ও তাদের নাগরিকত্ব, গত তিন বছরের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ও নিট সম্পদ এবং হোল্ডিং কোম্পানির ক্ষেত্রে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার পরও বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের নতুন করে তথ্য চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আমাদের সময়কে বলেন, এ বিষয়ে কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা আমি বলতে পারছি না। তবে আমাদের দিক থেকে লাইসেন্স দেওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। লাইসেন্স দেওয়ার আগে
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যেসব ডকুমেন্ট জমা নেওয়া হয়, সেগুলো লাইসেন্সপরবর্তী সময়ে যাচাই করারও নিয়ম রয়েছে। প্রয়োজনে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করে আগের তথ্য ভুল বা অসত্য দিয়েছে কিনা দেখা হয়। এক্ষেত্রে কোনো তথ্য ভুল দেওয়া হলে চুক্তি বাতিল হয়। সেটা চুক্তি স্বাক্ষরেও লেখা থাকে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় আইনি বিশেষ ছাড় দিয়ে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী, গত ৩ জুন নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিকে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত করা হয়। পরদিন গত ৪ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকের হাতে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি ব্যাংকটি। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত বছর ৮ আগস্ট নগদ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ ক (১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা পরিবারের সদস্যরা একক, যৌথ বা উভয় নামে কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না। তবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের শেয়ারের ক্ষেত্রে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ওই ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারী রয়েছেন। অর্থাৎ আইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে নগদকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক প্রজ্ঞাপনে আইনের ১৪ ক (১) ধারার উল্লেখ করে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার ক্ষমতাবলে ব্লু হেভেন, আরসিসি ও ফিনক্লুশন কর্তৃক ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ১৪ ক (১) ধারা প্রযোজ্য হবে না। অবশ্য কোনো প্রতিষ্ঠান কত শতাংশ শেয়ার নিয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি প্রজ্ঞাপনে।
বিদেশি শেয়ারহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই নিয়ে বক্তব্যের জন্য নগদ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তানভীর এ মিশুকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। গত রবিবার সন্ধ্যায় দেশের স্টার্টআপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তানভীর এ মিশুক বলেন, মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ এনেছে। এখনো সেবা শুরু হয়নি, তার পরও নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে ইতোমধ্যে ১১২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ ঢুকেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক চালু না হওয়ার আগে যে বিনিয়োগ এসেছে তা বিদেশি উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা যায়, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় মোট ৫২টি আবেদন পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে বিকাশ, নগদসহ ৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে। তবে পরিচালনা পর্ষদ কেবল ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ এবং ‘কড়ি ডিজিটাল পিএলসি’কে সম্মতিপত্র ইস্যুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটিকে ছয় মাসের মধ্যে মূলধন জোগাড়সহ সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করে চূড়ান্ত লাইসেন্সের জন্য যেতে বলা হয়। সে অনুযায়ী নগদকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কড়ি আরও ছয় মাস সময় চেয়ে নিয়েছে।
এদিকে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসিএফ) তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার এলএলসি নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ৪৯.৮ শতাংশের মালিক। এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। উইলমিংটনে অবস্থিত আরেক প্রতিষ্ঠান জেন ফিনটেক এলএলসির ড্যানিয়েল ভিনসেন্ট পারকারের রয়েছে ৫ শতাংশ মালিকানা। উইলমিংটনে নিবন্ধিত আরেক কোম্পানি ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসির হাতে রয়েছে ৩.২ শতাংশ শেয়ার। আর এই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জেরিন আহমেদ আঁখির নাম।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
নগদে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গ্রেট ফলসে নিবন্ধিত ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসির রয়েছে ২৫ শতাংশ মালিকানা। আর এই কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুহাম্মদ ফরিদ খান। মুহাম্মদ ফরিদ খানের ছেলে ফারহান করিম খানের হাতে রয়েছে আরও ৫ শতাংশ শেয়ার।
সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারে অবস্থিত ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১১ শতাংশের মালিক। এ প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করছেন নকিব চৌধুরী। ঢাকার পুরানা পল্টনে অবস্থিত ফিনটেকচুয়াল হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রতিনিধি মারুফুল ইসলাম ঝলকের রয়েছে ১ শতাংশ শেয়ার। মারুফুল ইসলাম নগদের নির্বাহী পরিচালক পদেও রয়েছেন।