খালের জায়গা নাল দেখিয়ে গড়ে উঠেছে ‘সুরের ধারা’
পাঁচ-ছয় বছর আগেও কাগজে-কলমে ছিল খাল। সেই জমি ভিটা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন (ডিসি অফিস)। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত সেই জায়গাতে গড়ে উঠেছে ‘সুরের ধারা’ নামে একটি গানের স্কুল। সেই স্কুলের উদ্বোধনে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনেক মুখ। সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণে ইতোমধ্যেই রাজউকের ছাড়পত্রও মিলেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনে এখন উঠে আসতে পারে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে খাল বরাদ্দকরণের সেই কাণ্ড-কীর্তি; বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট।
বহুতল ভবন নির্মাণে রাজউক থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করেছে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ। ছাড়পত্র অনুযায়ী, ভবনটির উচ্চতা যেহেতু সাড়ে ৭ হাজার বর্গ ফুটের ওপরে, তাই এটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ‘বিশেষ প্রকল্প’ হিসেবে একটি প্রকল্প রাজউকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে নকশার অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে সুরের ধারা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘রাজউক কোনো খালের ওপর ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় না; দেবে না। যেহেতু জায়গাটি এখন নাল জমি, তাই আইনগতভাবে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে রাজউকের বাধা নেই। তবে যারা খালকে নাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাই বলতে পারবে কিসের ভিত্তিতে নাল ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে রাজউকের কোনো দায় নেই।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে রাজউককে দ্রুত প্রকল্প ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ জন্য ফাইলটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করে রাজউক। সরকার পতনের পর সেই ফাইলটি আটকে গেছে বলে জানা গেছে। তবে বিশেষ প্রকল্প না নিলেও এখনো টিনশেড আধাপাকা সুরের ধারা স্কুলটি রয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে গানের স্কুলটি। প্রসঙ্গত, স্কুলের এ জমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নামে। স্থানীয়রা বলছেন, স্কুলটি মোট ১১০ শতাংশ জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিএস/এসএ খতিয়ান নম্বর ১-এর ৬৯২ দাগ, আরএস জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১৮৯৫ নম্বর দাগ এবং সিটি জরিপের ১ নম্বর খতিয়ানের ১১৪১২ নম্বর দাগের ওপর নির্মিত হয়েছে সুরের ধারা স্কুলটি। ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিটি জরিপের পর খালের ওই জায়গা নাল হিসেবে দেখানো হয়। যার ফলে সেখানে আর খাল নেই।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার আমাদের সময়কে বলেন, খাল কেউ কাউকে দিতে পারবে না। খাল, নদী পাবলিক প্রপার্টি। পাবলিক প্রপার্টি কেউ লিজ দিতে পারে না। যারা দিয়েছে, তারা আইন ভঙ্গ করেছে। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৯ সালে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। সকল খাল উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সংস্থাই ব্যবস্থা নেয়নি। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন।