আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদের খোঁজ করবে দুদক
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি এবং প্লট-ফ্ল্যাটও রয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিকবার অভিযোগ জমা পড়ে। তার সম্পদের অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও পাঠান। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি দুদক। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আছাদুজ্জামানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আছাদুজ্জামানের অঢেল সম্পদ রয়েছেÑ এমন অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। গণমাধ্যমেও নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এসব দুদকের নজরে আছে। চলতি সপ্তাহে কমিশন সভায় এসব অভিযোগ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
গত ১৬ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ নামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ২৪ জুন আরেকটি দৈনিকে ‘এবার আলোচনায় আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ছাড়া দুদকেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগে আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নামে ঢাকাসহ দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগের দাবিতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। এই আইনজীবী বলেন, সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও অনুসন্ধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যা দুদকের নিষ্ক্রিয়তা বলেই প্রতীয়মান হয়।
অভিযোগে যা বলা আছে : আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, জোয়ার সাহারা, সাভার ও পূর্বাচলে জমি, প্লট ও বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আছাদুজ্জামানের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে পরিবহনসহ নানা ব্যবসাতেও বিনিয়োগ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আছাদুজ্জামানের নামে গাজীপুরে দেড় একর জমি, আফতাবনগরে ৬ কাঠা প্লট, পুলিশ হাউজিং আবাসিক এলাকায় ৬ কাঠা, পূর্বাচলে ৩ কাঠা, একই এলাকায় ৫ কাঠার প্লট ও সাভারে ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এদিকে তার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা ভবন, ইস্কাটন গার্ডেন ও ধানমন্ডিতে দুটি আলিশান ফ্ল্যাট। এছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় আফরোজার নামে প্রায় ১১০ শতাংশ জমি, ঢাকার জোয়ার সাহারা এলাকায় ৫৪ শতক জমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে।
এদিকে আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় টাওয়ারে ৪ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট রয়েছে। আর ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ট্রিপ্লেক্স বাড়ি এবং আফতাবনগরে তার নামে ৫ কাঠা প্লট রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৯ আগস্ট ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আছাদুজ্জামানের অবৈধভাবে দখলে থাকা ১৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত দুটি দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন জমির মালিক। স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মিয়া ১৯৯৭ সাল থেকে ১৫ শতাংশ জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন। এই জমির পাশেই আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে। সেই সুযোগে রাজ্জাক মিয়ার জমি দখল করেন আছাদুজ্জামান।
এদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে পরিবার নিয়ে আছাদুজ্জামান দেশ ছেড়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর আগে জুনে পরিবারসহ সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠায় দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। পরে সিঙ্গাপুর থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। পালিয়ে যাননি, দেশে ফিরে সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।