কোথায় আছেন মাশরাফি, নিজেই জানালেন
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে প্রথমবারেরর সংসদ সদস্য হন। সেই সময়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব ছিল এই ক্রিকেটারের কাঁধে। সবশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন তিনি।
খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় মাশরাফি সংসদ সদস্য হওয়ায় নানা দিক থেকেই ছিল সমালোচনা। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে টিকতে না পেরে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। ফলে বিলুপ্ত হয় মাশরাফির সংসদ সদস্য পদ।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বাদ জাননি মাশরাফি বিন মর্তুজাও। নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত এই তারকার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা।
ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে থাকতে পারেননি মাশরাফি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোনো স্ট্যাটাস দেননি। তবে এসব বিষয় নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি। আন্দোলনে নামতে পারেননি তিনি, সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিজের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘যদি সরাসরি বলি, তাহলে অবশ্যই আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে। কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’
এদিকে শেখ হাসিনার পতনের আগে থেকেই দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের পরেও অনেকে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর অনেকে পালাতে গিয়ে পড়েছেন ধরা। তবে মাশরাফি জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে নিজ পরিবারের সঙ্গেই অবস্থান করছেন তিনি।
নিজের শারীরিক অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে ঠিক আছি। মানসিকভাবে অবশ্যই ভালো অবস্থায় নেই। আছি আর কী। ঢাকাতেই আছি, পরিবারের সঙ্গে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সম্পদ যা কিছু আছে, সব খেলোয়াড়ি জীবনেই গড়া। যে কোনোভাবেই খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। পূর্বাচলে একটি জমি আছে, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর সরকার থেকে সবাই পেয়েছিলাম ৫ কাঠা করে। মিরপুরে একটা বাড়ি আছে, ২০০৮ সালে আইপিএল খেলে আসার পর করা। মিরপুরে আরেকটি বাড়ি করছি, যেখানে পরিবার নিয়ে উঠব, এটাও ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি। এখনও উঠতে পারিনি, কাজ চলছে। ২০১৮ সালের পরের আয় দিয়ে তেমন কোনো সম্পদ গড়তে পারিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা ও ২০২৪ সালের হলফনামা দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমি দাবি করলে তো লাভ নেই। যে কেউ খতিয়ে দেখলেই জানতে পারবে।’
মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত আমার এন্ডোর্সমেন্ট ছিল অনেক। ২০টির ওপরে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। খেলাধুলা করে ও স্পন্সরশিপের আয় থেকেই এসব করেছি। নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম, ক্রিকেটার হিসেবে হয়তো সবার আছে আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। রাজনীতিতে নামলে সেটা থাকবে না। কিন্তু ওই চ্যালেঞ্জ আমি নিতে চেয়েছি। মানুষের জন্য বড় পরিসরে কিছু করতে চেয়েছি। এই জায়গায় নিজের কাছে পরিষ্কার ছিলাম। এখন যে সরকার এসেছে, আমরা যদি আমার জায়গা থেকে, আপনার জায়গা থেকে সমালোচনা করে নিচে নামাই, তাহলে তো এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে। তো, আমি যে জায়গায় ছিলাম, হয়তো রাজনীতিতে না এলেও পারতাম। ভালো ছিলাম। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।’