বন্দরে জট, ধুঁকছে রপ্তানি খাত
কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি রপ্তানি খাত। জুলাই মাসের শেষদিকে দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, কারফিউ চলাকালে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ এবং সাধারণ ছুটিÑ সব মিলিয়ে আমদানি ও রপ্তানি দুটোই থমকে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম আবার চালু হলেও বন্দর পরিচালনা এখনো স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। একদিকে আমদানি করা পণ্যের জট, অন্যদিকে রপ্তানিমুখী পণ্য জাহাজীকরণেও বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে আগে থেকে তৈরি হওয়া কনটেইনার জট আরও তীব্র হচ্ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে জরুরি পদক্ষেপ চাইছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এমনিতেই বড় ক্ষতিতে রয়েছেন তারা। কারখানাগুলোতে উৎপাদন স্বাভাবিক হয়নি। আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কারখানাগুলোতে কাঁচামালেরও সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বন্দরের কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় পণ্য জাহাজীকরণে জট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে কারখানাগুলো ও পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। বন্দরে পণ্য খালাস হলেও তা পরিবহন হচ্ছে না। সবমিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। এ খাতের রপ্তানি ধুকছে বলে জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, জুলাইয়ের শেষদিকে রপ্তানি খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী আগামী সপ্তাহ থেকে হয়তো সব স্বাভাবিক হতে থাকবে। অর্থনীতির চাকা সচল করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব আমদানি-রপ্তানিতে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্দরে কনটেইনারের চাপ বেশি থাকলে কনটেইনার খালাসে বিঘ্ন ঘটে। সেই সঙ্গে রপ্তানিমুখী কনটেইনার নিয়েও বিপত্তিতে পড়তে হয়। এ কারণে ডিপোতে রপ্তানিমুখী কনটেইনারের জট বেঁধে যাচ্ছে। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছেÑ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক এবং যোগাযোগব্যবস্থা সচল হওয়ায় বন্দর পরিচালনায় গতি বেড়েছে; কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের জট দীর্ঘ হওয়ায় পণ্য রপ্তানিতে তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিও বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
চট্টগ্রামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জোরাক ট্রেড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরশাদ হোসেন শালিম বলেন, বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়নি। আগের জটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন পণ্যের জট। সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি এমনিতেই কমছে। গত জুলাইয়ের শেষভাগে রপ্তানি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত কনটেইনার জট না কাটলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিএমএ) চেয়ারম্যান আহমেদ মজুমদার বলেন, রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ব্যাপকভাবে কমে যাবে। বিদেশি ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নেবে। ইতোমধ্যে ক্রেতা হারিয়েছি আমরা। তাই রপ্তানি চেইন দ্রুত স্বাভাবিক করায় গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াটাও দরকার।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
চলমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখার লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।