যেভাবে পালালেন হাসিনা
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানাকেও। এ জন্য তাকে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা তখন ভাষণ দিতে চাইলেও অপারগতা প্রকাশ করা হয়। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা একটি গাড়িতে করে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে উড়াল দেয় ভারতের উদ্দেশে। সঙ্গে নিয়ে যান ৬টি স্যুটকেস। এর একটি ভিডিওচিত্রও পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি যখন হেলিকপ্টারে উঠছিলেন, তখনো গণভবনের আশপাশ ঘিরে রাখেন লাখ লাখ ছাত্র-জনতা। এ সময় পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উড়াল দেওয়ার পর উন্মুক্ত হয়ে যায় গণভবন; চালু হয় ইন্টারনেট সংযোগও। এরপর গণভবনের ভেতরে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
শেখ হাসিনা প্রথমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি কিছু সময় অপেক্ষার পর ভারতের রাজধানী দিল্লির উদ্দেশে একটি বিমানে রওনা হন। এ বিষয়ে ত্রিপুরার জনপ্রিয় দৈনিক স্যান্দনের সম্পাদক ও আগরতলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুবল দে আমাদের সময়কে বলেন, একটি সামরিক হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা আগরতলায় আসেন। এর কিছু সময় পর তিনি দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী ভারতের সামরিক বাহিনীর কার্গো বিমানটি (সি-১৩০) দিল্লিতে অবতরণ না করে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। তাদের বহনকারী বিমানটি ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের পর থেকে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ পর্যন্ত এর গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীসহ দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। প্রসঙ্গত, গাজিয়াবাদ ভারতের এনসিআর (ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন) অঞ্চলের অংশ। এর অবস্থান দিল্লি থেকে মাত্র ৩১ কিলোমিটার দূরে হলেও এটি উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত। গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, তিনি রেহানাসহ সেখানেই অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চান তিনি, যা দেশটির সরকার নাকচ করে দেয়। যদিও এ খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানা গেছে, হিন্দনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দেখা করেন। সেখান থেকে শেখ হাসিনা যে গন্তব্যে যাবেন, সে লক্ষ্যে সি-১৩০ বিমানের পাশে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আরও দুটি এয়ারক্রাফট (সি-১৭ ও সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিস) হ্যাঙ্গারে অপেক্ষমাণ থাকে। তিনি সি-১৩০ এয়ারক্রাফট রিফুয়েল করে সেটিতেই যাত্রা করবেন নতুবা অপেক্ষামাণ অন্য দুটি বিমানের একটিতে চড়ে যাবেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু লিখেছে, শেখ হাসিনা ভারতে নয়, লন্ডনে আশ্রয় চেয়েছেন। তবে ভারতের দিল্লি হয়ে তিনি লন্ডনে যাবেন। সোমবার রাতটা হয়তো তারা দিল্লিতে থাকবেন। আরেক সংবাদ মাধ্যম নিউজ১৮ বলছে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের নাগরিক। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী। যে কারণে তারা যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। এদিকে এনডিটিভি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল